খুলনার দাকোপে সুন্দরবনের কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রটি গত অক্টোবর থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয় বন বিভাগ
খুলনার দাকোপে সুন্দরবনের কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রটি গত অক্টোবর থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয় বন বিভাগ

আরেক করমজল সুন্দরবনের ‘কালাবগী ইকো ট্যুরিজম’

বাগেরহাটের মোংলার করমজলের মতো খুলনার দাকোপে হয়েছে সুন্দরবনের কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। খুলনা শহর থেকে সড়কপথে ৫০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের কালাবগী ফরেস্ট স্টেশনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রটি। চলতি বছরের ২০ অক্টোবর থেকে পর্যটকদের সেখানে ভ্রমণের জন্য অনুমতি দিতে শুরু করেছে বন বিভাগ।

পর্যটকবাহী ট্রলার কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের ঘাটে ভিড়তেই বানরগুলো দল বেঁধে নেমে আসে ঘাটের দিকে। তাড়া দিতেই শুরু হয় তাদের স্বভাবসুলভ দুষ্টুমি। কেউ বাদাম বা অন্য কোনো খাবার দিলে চোখের পলকে সেটা নিয়ে আবার উঠে যাচ্ছে গাছে। এর পাশেই হরিণ লালন-পালন ও প্রজনন কেন্দ্র। উপরিভাগ উন্মুক্ত খাঁচায় ঘেরা খোলা জায়গায় মায়াবী চিত্রা হরিণের পাল। পাশেই গরানকাঠ দিয়ে ঘিরে রাখা ছোট ছোট পুকুরে আছে কুমির।

ট্রলারচালক খলিলুর রহমান বলেন, মাঝেমধ্যে পর্যটকদের নিয়ে এখানে আসা হয় তাঁর। অনেক সময় বানরের দল ট্রলারে ঢুকে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বনের মধ্যে লুকিয়ে যায়। এখানকার হরিণগুলোর চরিত্রও ভিন্ন। সাধারণত জঙ্গলের হরিণ মানুষ দেখলে দৌড়ে পালায়। আর এখানে হরিণগুলো মানুষ দেখলে কাছে ছুটে আসে, কেউ খেতে দিলে খায়।

পর্যটকবাহী ট্রলার কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের ঘাটে ভিড়তেই বানরগুলো দল বেঁধে নেমে আসে ঘাটের দিকে

জনপ্রতি এই ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে প্রবেশের ফি ৪০ টাকা। সুন্দরবন দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। আর চারপাশে গাছগাছালির ভেতর দিয়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটারের দীর্ঘ পাকা পথ ধরে বনের মধ্যে অনায়াসে হেঁটে হেঁটে দেখা যাবে সুন্দরবনের সৌন্দর্য।

সরেজমিন কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দর্শনার্থীর নজর হরিণের দিকে। কেউ কেউ সাবধানে উঁকি দিচ্ছেন কুমিরের পুকুরে। বনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে অনেকে বসে পড়ছেন বনের বিভিন্ন জায়গায় বসার জন্য তৈরি করা বিশ্রামঘরে। আবার কেউ কেউ ট্যুরিজম কেন্দ্রের রেস্টুরেন্ট থেকে চা, কফিসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কালাবগী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করে আড্ডা দিচ্ছেন।

খুলনা থেকে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে আসা স্কুলছাত্র আবরার হোসেন বলেন, ‘এত কাছ থেকে সুন্দরবন দেখতে পাব, ভাবিনি। বেশি ভালো লেগেছে পাকা ওয়াক ওয়ে দিয়ে হাঁটার সময়। রাস্তার দুই পাশের জঙ্গলে বানরের দৌড়ঝাঁপ, হরিণ আর শূকর দেখেছি। বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হরিণগুলো শান্তশিষ্ট, মানুষ দেখলেই কাছে ছুটে আসে।’

কয়রা থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ট্যুরিজম কেন্দ্রজুড়েই যেন হরিণ আর বানরের রাজত্ব। নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির, হরিণ-কুমির দেখা, বানরের সঙ্গে দুষ্টুমি—সব মিলিয়ে অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি।’

গরানকাঠ দিয়ে ঘিরে রাখা ছোট ছোট পুকুরে আছে কুমির

কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের কর্মকর্তা আবদুল হাকিম বলেন, এখানে পর্যটকদের জন্য নৌকায় করে সুন্দরবনের নানা খালের ভেতর প্রবেশের সুযোগ আছে। মাথাপিছু ১৫০ টাকা সরকারি রাজস্ব দিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে খালে ঘোরা যাবে। প্রতিদিন ট্যুরিজম কেন্দ্রে ভ্রমণে আসেন দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক পর্যটক।