জমির জন্য বাবাকে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে মারধর, ছেলেকে গ্রেপ্তারের দাবি

ভোলার দৌলতখান উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আবুল হোসেনের এই জমি দখল করে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁর ছেলে মোশারেফ হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার দৌলতখানে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ছেলে বাবাকে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটার পর বাবা ওই ছেলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও হুমকি দিতে থাকায় হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় ছেলেকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন বাবা।

হামলার শিকার হওয়া বাবার নাম আবুল হোসেন (৬৫)। তাঁর বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের চরগুমানী গ্রামের ঘুইঙগারহাট এলাকায়। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। আবুল হোসেনের অভিযুক্ত ওই ছেলের নাম মোশারেফ হোসেন। তিনিও স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

মারধরের ঘটনায় থানায় জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও বাবা আবুল হোসেনের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর মেজ ছেলে মো. মোশারেফ হোসেন মাদকাসক্ত। মাদক বিক্রি ও সেবনের দায়ে দু-তিন মাস জেল খেটেছেন। তাঁর বাবা আবুল হোসেন ৪০-৪২ বছর আগে চরগুমানী গ্রামে ৬০ শতাংশ জমি কিনেছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। অনেক কষ্টে তিন ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তাঁরা চাকরি করছেন। এক মেয়েকে এইচএসসি পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পাঁচ বছর আগে অবসরে গেছেন। অবসরে যাওয়ার পরে তিনি ২০২৪ সালে হজ করার সিদ্ধান্ত নেন। হজে যাওয়ার আগে তিনি একমাত্র মেয়েকে বাড়ি নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকা দিলে মেজ ছেলে মোশারেফ বাড়ির অংশ লিখে দিতে বলেন। পরে আবুল হোসেন বাড়ির সব জমি তিন ছেলের মধ্যে সমানভাগে হেবা করে দেন। ওই সময় ছেলেদের তিনি বলেছেন, যত দিন তিনি বেঁচে আছেন, তত দিন জমিজমা তাঁর দখলেই থাকবে। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলেরা পাবেন। অন্য ছেলেরা এ কথা মেনে নিলেও মেজ ছেলে এটা মানেননি।

আবুল হোসেন আরও বলেন, তাঁর জমি মহাসড়কের পাশে। সম্প্রতি ওই জমিতে বালু ফেলার কাজ শুরু করলে মেজ ছেলে মোশারেফ হোসেন বাধা দেন। এ নিয়ে তাঁর (বাবা আবুল হোসেন) সঙ্গে ছেলে মোশারেফ হোসেনের কথা-কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি হয়। এমনকি হজে যাওয়ার আগে তাঁকে (আবুল হোসেন) থানায় নিয়ে আটকে রাখেন তাঁর ছেলে। ওসি সব শুনে আবুল হোসেনকে ছেড়ে দেন এবং হজ থেকে ফিরলে বিষয়টি ফয়সালা করে দেবেন বলে জানান। হজ থেকে ফিরে এলে ফয়সালা দেওয়ার আগেই ২৬ জুলাই রাতে মোশারেফ হোসেন দেড় শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সঙ্গে নিয়ে জমি দখল করে একটি টিনের ঘর তোলেন। এ সময় অসুস্থ বাবা ছেলেকে বাধা দিতে গেলে হামলার শিকার হন। তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্র ও লাঠির আঘাত লাগে। এতে তিনি আহত হন।

সন্ত্রাসীদের দিয়ে নিজের বাবাকে মারধর করা এবং জমি দখলের অভিযোগের বিষয়ে মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা আবুল হোসেনকে বড় ও ছোট ছেলে সম্মোহিত করেছে। তাদের সব দিয়ে বাবা মেজ ছেলে ও মেয়েকে ঠকাতে চাইছেন। এ কারণে আমি আমার পাওনা বুঝে নিতে চেয়েছি। কিন্তু তিনি (বাবা) পাওনা বুঝিয়ে দিতে চাইছেন না। তাই আমাকে দেওয়া জমি আমি দখল করেছি।’

তবে মোশারেফ হোসেনের বাবা আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘২৮ আগস্ট আমি থানায় অভিযোগ করার পর মোশারেফ হোসেন সেখানে ঘর নির্মাণের জন্য ইট–বালু এনে রেখেছে। বলেছে, তার কাজে এবার বাধা দিলে খুনোখুনি হয়ে যাবে। আমি এখন আতঙ্কে আছি। আমি প্রধান উপদেষ্টা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে এ অত্যাচার-নির্যাতনের বিচার চাই।’

দৌলতখান থানার উপপরিদর্শক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আবুল হোসেনকে ছেলে মোশারেফ মারধর করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে ছেলে মোশারেফের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হবে।