সিলেটে চিকিৎসাশিক্ষার ইতিহাস খুব পুরোনো নয়। ৬০ বছর আগেও সিলেটে বসে চিকিৎসাশিক্ষা সম্পন্ন করা ছিল কল্পনার মতোই। তবে কল্পনা বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৬২ সালে। ওই বছর প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ। দীর্ঘদিন ধরে এটিই ছিল সিলেটে চিকিৎসাশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এর তিন দশক পর ১৯৯৫ সালে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ নামে একটি বেসরকারি কলেজ স্থাপিত হয়।
ধীরে ধীরে চিকিৎসাশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়ে। এমনকি বিভাগীয় শহর থেকে জেলা পর্যায়েও মেডিকেল কলেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন সিলেটে একটি পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি সরকারি ও ৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আছে। মাত্র ছয় দশকের ব্যবধানে মানুষের কল্পনা এখন হাতের মুঠোয়। শুধু তা–ই নয়, চিকিৎসাশিক্ষায় সুযোগ বাড়ার পাশাপাশি এখানে সাফল্যের ধারাও আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ সিলেটের সবচেয়ে বড় মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমবিবিএস ডিগ্রি প্রদান থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের পর ১৯৯৮ সালে নগরের তেলিহাওর এলাকায় নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এটি দক্ষিণ সুরমায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এর পর একে একে সিলেট শহরে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০১৭ সালে হবিগঞ্জ জেলায় সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরু করে। তবে সব ছাপিয়ে উচ্চতর চিকিৎসাশিক্ষা ও গবেষণার জন্য ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামের একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এটি দেশের চতুর্থ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। নগরের চৌহাট্টা এলাকায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয় অবস্থিত। তবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৮০ একর জমির ওপর স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসাশিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সিলেটের মেডিকেল কলেজগুলোতে বর্তমানে এমবিবিএসে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ও বিডিএসে ৩০৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানে চিকিৎসাশিক্ষায় পরিবেশ, মান ও সুযোগ-সুবিধা ভালো। ফলে নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের প্রচুরসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী নিয়মিত এখানে পড়াশোনা করতে আসছেন। এখানকার কলেজগুলোর অবকাঠামো সুবিধাও ভালো। এ ছাড়া শিক্ষক-সংকটও সেই অর্থে নেই। এর ফলে শিক্ষার্থীরাও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেন।
এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশির চক্রবর্তী মনে করেন, ‘দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেট চিকিৎসাশিক্ষায় অনেক এগিয়ে রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। আমরা শিক্ষার মান ধরে রাখতে পারছি কি না, এটা নিয়ে ভাবতে হবে। কোয়ালিটি (মান) যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে তো হবে না। তবে সিলেটের মেডিকেল কলেজগুলো তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো।’