কাল সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে আজ রোববারও বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। এ কারণে আজও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার হচ্ছে। তিন ধরে এই ঘাটে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ রয়েছে। তবে এখন ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রী ও যানবাহন নদী পারাপার হচ্ছে।
গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেন ইদ্রিস আলী (৫৫)। ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। এক সপ্তাহ আগে স্ত্রী ও সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। আজ সকালে তিনি বাড়িতে যাচ্ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাট এলাকায় কথা হলে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘গ্রামে মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজন আছেন। বউ ও ছেলেমেয়েকে আগেই বাড়িতে পাঠিয়েছি। দোকানে বেচাবিক্রির ব্যস্ততা থাকায় আমি তখন যেতে পারিনি। আজ বাড়িতে যাচ্ছি।’
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কলিমহর গ্রামের আজাহার উদ্দিন (৪০) স্ত্রী ও দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঈদের দু-তিন দিন আগে রাস্তাঘাটে ভীষণ চাপ থাকে। পথেঘাটে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই ভোগান্তি এড়াতে আজ বাড়িতে যাচ্ছি। সড়কপথে (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) ও ঘাটে এসে আজ তেমন সমস্যা হয়নি। আরামেই আসছি।’
ইদ্রিস ও আজাহারের মতো এ রকম অনেকে ব্যস্ততার কারণে, কেউ সড়কের ভোগান্তি এড়াতে আজ বাড়িতে ফিরছেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় তীব্র স্রোত রয়েছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে এ কারণে স্বাভাবিক সময়ের থেকে ফেরি চলাচলে সময় বেশি লাগছে। স্বাভাবিক সময়ে পাটুরিয়া প্রান্ত থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে যেতে ফেরিগুলোর প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লাগে। তবে স্রোতের কারণে ফেরিগুলোর বর্তমানে প্রায় এক কিলোমিটার উজান দিয়ে চলতে পৌনে এক ঘণ্টা সময় লাগছে। এই স্রোতের প্রতিকূলে লঞ্চগুলোও চলাচল করতে বেশি সময় লাগছে। স্বাভাবিক অবস্থায় পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে যেতে লঞ্চে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগলেও এখন ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট লাগছে।
ঈদে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ হয়ে চলাচল করে থাকে। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এই নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমে এসেছে। এরপরও ঈদে এই ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে এই নৌপথে ১৭টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। পাটুরিয়া প্রান্তে ৫টি ঘাটের মধ্যে ৩টি ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে ৩৪টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পাটুরিয়ায় ২২টি ও আরিচায় ১২টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হবে। এ ছাড়া আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে যাত্রী পারাপারে ৪৮টি স্পিডবোট রয়েছে। তবে রাতে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকবে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রায় গত তিন দিন পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল। বিশেষ করে গতকাল শনিবার চাপ বেশি ছিল। তবে পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি থাকায় যাত্রীদের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। আজ সকালেও বেশ যাত্রী ও যানবাহন পারাপার হয়। ঘাটে আসার পরপরই যাত্রী ও যানবাহন নৌপথ পারাপার হচ্ছে।