মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় হামলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যসহ তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের ছোনগাছা দোসতিনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া এক চেয়ারম্যানের গ্রেপ্তারের দাবিতে মাগুরা শহরের ভায়না মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে গতকাল রাত ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আহত ওই ইউপি সদস্যের নাম চাঁদ আলী সরদার (৩৭)। তিনি শ্রীকোল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি। হামলায় তাঁর দুই ভাই মাসুদুল সরদার (৪৫) ও ওবায়দুল সরদার (৫০) আহত হয়েছেন। চাঁদ আলী ও ওবায়দুলকে রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর মাসুদুল মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ভর্তি।
হামলায় আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে শোকসভা আয়োজনের বৈঠক ছিল। ২৭ আগস্ট ওই কর্মসূচি পালন করা হবে। এ উপলক্ষে শ্রীকোল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন চাঁদ আলী সরদার ও তাঁর ভাই মাসুদুল সরদার। বৈঠক শেষে বাড়িতে ফেরার পথে রাত পৌনে নয়টার দিকে ছোনগাছা ও দোসতিনা গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা হয়। খবর পেয়ে আরেক ভাই ওবায়দুল সরদার খোঁজ নিতে গেলে তাঁকেও কুপিয়ে জখম করা হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, চাঁদ আলী ও ওবায়দুলের শরীরের বেশ কিছু জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। এর মধ্যে ওবায়দুলের একটি পায়ের গোড়ালি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই তাঁদের দুজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
খবর পেয়ে রাতেই আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালে যান মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। রাত ১১টার দিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ভায়না মোড় এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে যশোর, ঝিনাইদহ ও ঢাকামুখী যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি আটকা পড়ে। মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন কয়েক শ নেতা-কর্মী। সমাবেশে বক্তারা এ হামলার জন্য শ্রীকোল ইউপির চেয়ারম্যান ও শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়াকে দায়ী করেন।
আহত ওবায়দুল সরদারের ছেলে শাহাবুল সরদার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহর লোকজন তাঁর বাবা ও চাচাদের ওপর হামলা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে শ্রীকোল ইউপির চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া আজ বুধবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, ‘এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। কারণ, আমি যত দূর জেনেছি, ছোনগাছায় যে মারামারি হয়েছে, সেটা দুই গ্রামের সামাজিক দলের বিরোধ। এর সঙ্গে জেলার রাজনীতির কোনো যোগসূত্র নেই। আমাকে জড়ানো হচ্ছে ওপর মহলের ইন্ধনে। আমরা যেহেতু এমপি সাহেবের (সাইফুজ্জামান শিখর) সঙ্গে রাজনীতি করি না, তাই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এটা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে সাইফুজ্জামান শিখর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, পূর্বশত্রুতার জেরে ওই হামলা হয়েছে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শহরে কিছুক্ষণ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন। পরে অবরোধ তুলে নেয়।’