লবণ উৎপাদনের মৌসুম শেষ হতে আরও সাত দিন সময় আছে। এর মধ্যে কক্সবাজার উপকূলের ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে ২১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। বৃষ্টিবিহীন তিন দিন সময় পাওয়া গেলে উৎপাদিত হবে আরও অন্তত ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণ। ইতিমধ্যে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। বাণিজ্যিকভাবে লবণ চাষে গত ৬২ বছরে ২১ লাখ মেট্রিক টন লবণ কখনো উৎপাদিত হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, জেলাতে বাণিজ্যিক লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পাঁচ মাস) জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীতে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। ৬ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২১ লাখ ৭৫ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে এই সময়ে উৎপাদিত হয়েছিল ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন লবণ বেশি উৎপাদন হয়েছে।
এ বিষয়ে বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, মৌসুমজুড়ে দাবদাহ, কম বৃষ্টি, ৬৬ হাজার একর জমির শতভাগে আধুনিক পলিথিন প্রযুক্তিতে চাষবাদ এবং অতিরিক্ত তিন হাজার একরের বেশি জমিতে লবণ চাষের কারণে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হয়েছে।
বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ২০২০ সালে যখন লবণনীতি করা হয়, তখন দেশের লোকসংখ্যা ১৮ কোটি ধরে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন দেশের জনসংখ্যা গণনায় পাওয়া গেছে ১৭ কোটি। এ ক্ষেত্রে ২১ লাখ মেট্রিক টন লবণ দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের বার্ষিক চাহিদা পূরণ সম্ভব। এখন দৈনিক গড়ে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে ১২ মেট্রিক টন।
গতকাল রোববার টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, হ্নীলা ইউনিয়নের রঙিখালী, খারাংখালী, সিকদারপাড়া, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, পিএমখালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উৎপাদিত লবণচাষিরা মাঠের ওপর স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ কেউ বাড়িঘরের আঙিনায় মজুত করে তার ওপর পলিথিন বিছিয়ে দিচ্ছেন।
রঙিখালী গ্রামের চাষি গিয়াস উদ্দিন ও ও খারাংখালী গ্রামের চাষি রহমত উল্লাহ বলেন, এখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকায়। কয়েক দিন পর অর্থাৎ বৃষ্টি হলেই লবণের মৌসুম শেষ হবে। তখন প্রতি মণ লবণের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা বেড়ে যেতে পারে। প্রতি মণ লবণ তখন ৫০০ টাকায় বিক্রি হবে এই আশায় চাষিরা লবণ মজুত করছেন।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, টানা ১৮ থেকে ১৯ দিনের দাবদাহ পরিস্থিতিতে লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছে। তা ছাড়া লবণের দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গত মৌসুমে প্রতি মণ লবণ ২৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়। এবার ২৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ লবণচাষি সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি ও মহেশখালীর লবণচাষি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরুর ৬২ বছরে এবার চাষিরা লবণ উৎপাদনে যে সাফল্যে দেখিয়েছেন, অতীতে এমনটা আর হয়নি।