‘ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ করে ধোঁয়ার গোলা বের হয়, ট্রলারের ছাদটা উড়ে যায়। ট্রলারে এক পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাদ খুলে গেলে আমি পন্টুনে পা উঠাইয়া প্রাণ বাঁচাই।’
কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ট্রলারে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ওই ট্রলারের মাঝি বাকের। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঘটনাস্থল মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ফতুল্লা ডিপোর কার্যালয়ে বসে এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দেন তিনি।
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে ফতুল্লায় মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ডিপোর কাছে নদীর তীরে জ্বালানি তেলের ড্রামবাহী ট্রলারে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। আরও একজনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সময় বেঁচে যান বাকের মাঝি। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ ট্রলারের দুই শ্রমিক।
বাকের মাঝি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মেঘনা ডিপো থেকে জ্বালানি তেল নিছি। তেল নেওয়া হয়ে গেছে। স্টাফরে কইছি কাছি ছাড়, ট্রলার স্টার্ট দেও, আমরা চলে যাব। আমি ওপরে ছিলাম। ওপর থেকে একটা পা ট্রলারে রাখছি, আরেকটা পা পন্টুনেই ছিল। মিস্ত্রি নিচে গিয়ে ট্রলারের ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার পরও ইঞ্জিন স্টার্ট হয় নাই। বিকট শব্দে হইছে, শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়ার গোলা বের হয়ে ট্রলারের ছাদটা উড়ে গেছে। ট্রলারে থাকা একজন সঙ্গে সঙ্গে পানিতে লাফ দিয়ে পড়ে। সে আবার উঠছে, তয় হের পরনে কিচ্ছু ছিল না, পড়ে আমার কাছে থাকা গেঞ্জি খুলে দিলে সে পরে নেয়। সে ওপরে উঠে দৌড়াইয়া কোথায় গেছে, জানি না।’
আজ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাকিব আল রাব্বিকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, এ ঘটনার জন্য কারও কোনো গাফিলিতি আছে কি না, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।
রাত সাড়ে আটটার দিকে আগুন লাগা ট্রলারটি বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহমেদ। এর আগে ট্রলারটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে রাখা অবস্থায় এতে আবার আগুন ধরে যায়। একপর্যায়ে ট্রলারটির রশি পুড়ে গিয়ে মাঝনদীতে চলে গিয়েছিল। এ কারণে আগুন নেভানো শেষে ট্রলারটিকে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।