হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হককে (ব্যারিস্টার সুমন) ‘হত্যার পরিকল্পনার’ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও তদন্ত করা হচ্ছে। তবে ‘পরিকল্পনা ফাঁসের’ চার দিনেও রহস্যের জট খোলেনি। রহস্য উদ্ঘাটন করা এখন পুলিশের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য সায়েদুল হক।
গত শনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সংসদ সদস্য সায়েদুল হক। সেখানে তিনি দাবি করেন, চুনারুঘাট থানার ওসির কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তাঁকে হত্যা করার জন্য চার থেকে পাঁচজনের অজ্ঞাতনামা একটি দল মাঠে নেমেছে। এ অবস্থায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হবিগঞ্জ পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও এ ঘটনার তদন্ত চলছে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে আরও অনেকবার পড়েছেন উল্লেখ করে আজ মঙ্গলবার সংসদ সদস্য সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, আমার থানার ওসি এসে যখন আমাকে এ ঘটনাটি জানান এবং এ তথ্য প্রদানকারীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দেন, তখনই আমি ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।’ তিনি বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর শোক প্রস্তাবের চেয়ে আমি জীবিত থাকা অবস্থায় নিশ্চিত হওয়া দরকার কেন আমাকে হত্যা করা হবে। তবে আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না।’
তিনি ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। দুর্নীতিবাজদের নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের সামনেও কথা বলেছেন। এখন কারা তাঁর এ কাজের ওপর ক্ষুব্ধ, এ বিষয়টি তাঁর পক্ষে চিহ্নিত করা কঠিন।সৈয়দ সায়েদুল হক, সংসদ সদস্য, হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর)
ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৮ জুন রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তি প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে তাঁর কাছে ব্যারিস্টার সুমনের ফোন নম্বর চান। তখন ওসি ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চান, কেন তাঁর নম্বর প্রয়োজন? উত্তরে ওই ব্যক্তি জানান, ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে জরুরি কথা বলতে চান তিনি। এ ফোন নম্বর না দিলে আত্মহত্যা করবেন। ওসি সংসদ সদস্যের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ওই ব্যক্তিকে ফোন নম্বরটি দেননি। এর কিছুক্ষণ পরই ওই ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে একটি খুদে বার্তা পাঠান এবং পরে তা ডিলিট করে দেন। এর কিছুক্ষণ পর আবারও একটি খুদে বার্তা পাঠান ওই ব্যক্তি। তাতে লেখা ছিল, ব্যারিস্টার সুমনের কিছু শত্রু আছে, যারা তাঁর ক্ষতি করতে পারে। এটিও পরে ডিলিট করে দেওয়া হয়।
ওসি হিল্লোল রায় বলেন, এ বার্তা পেয়ে তিনি কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। তিনি এর পরদিন (২৯ জুন) সংসদ সদস্যের চুনারুঘাটের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে বিষয়টি তাঁকে জানান। তখন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন নম্বরটি দেওয়া হয় ব্যারিস্টার সুমনকে। তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিট কথা বলেন।
ওই কথোপকথনের বিষয়ে সংসদ সদস্য সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার সঙ্গে কথা বলে জানায়, কন্ট্রাক্ট কিলারদের কিছু সদস্য আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। এর পেছনে দেশের বড় বড় কিছু লোক জড়িত। এ কন্ট্রাক্ট কিলারদের মধ্যে ওই ব্যক্তিটিও ছিল। যখন সে আমার নাম শুনতে পায়, তখনই সে এ কন্ট্রাক্ট কিলিং থেকে সরে আসে। কারণ, ওই ব্যক্তি আমাকে পছন্দ করে ও আমার একজন ভক্ত। পাশাপাশি সে একজন সিলেটি। সে সিলেটি দরদি হয়েই এ গোপনীয়তা আমাকে জানাতেই ওসির কাছে ফোন নম্বরটি চেয়েছিল।’
সায়েদুল হক বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। দুর্নীতিবাজদের নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের সামনেও কথা বলেছেন। এখন কারা তাঁর এ কাজের ওপর ক্ষুব্ধ, এ বিষয়টি তাঁর পক্ষে চিহ্নিত করা কঠিন। আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে তিনি জিডি করেছেন। এখন পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব এ ঘটনার গভীরতা ও এর রহস্য উদ্ঘাটনের ব্যবস্থা নেওয়া।
চুনারুঘাট থানার ওসি হিল্লোল রায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় সময়ই দেশের নানা প্রান্ত থেকে লোকজন ফোন করে সংসদ সদস্যের ফোন নম্বর চান। অনেক সময় সংসদ সদস্যের (ব্যারিস্টার সুমনের) অনুমোদন ছাড়া তিনি ফোন নম্বর দিতে পারেন না। ওই দিন এক ব্যক্তি বেশ কয়েকবার ফোন করে নম্বর চাওয়া ও খুদে বার্তা পাঠানোর কারণে তিনি বিষয়টিকে একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখেন।
এ ঘটনার পরপরই ওই দিন (২৮ জুন) পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে চুনারুঘাট থানায়। পাশাপাশি এ ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান ওসি। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনাটি হবিগঞ্জ পুলিশের পাশাপাশি সদর দপ্তর থেকেও ব্যাপক তদন্ত করছে। আশা করা যায়, খুব শিগগিরই পুলিশ এর রহস্য উদ্ঘাটন করবে।’