আবদুল কাদের শেখ ও জাহানারা বেগম
আবদুল কাদের শেখ ও জাহানারা বেগম

১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যু, শেষ হলো ৬০ বছরের দাম্পত্য

দীর্ঘ ৬০ বছরের দাম্পত্য জীবন ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সমাপ্ত হলো। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্ত্রী জাহানারা বেগম (৭৫)। শোকে কাতর স্বামী আবদুল কাদের শেখ (৮৫) মারা যান পরের দিন গতকাল বুধবার সকাল সোয়া আটটার দিকে। পরে একসঙ্গে জানাজা শেষে একই কবরস্থানে পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রীকে দাফন করা হয়েছে।

এমন ঘটনায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদিপুর ১ নম্বর কলোনি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা শোকাহত হয়ে পড়েছেন। ভূমিহীন আবদুল কাদের শেখ ও জাহানারা বেগম দম্পতি সরকারি এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করতেন। আবদুল কাদের শেখ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

মৃত আবদুল কাদের শেখের ভাতিজা আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্বাস আলী প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ফুফা ও ফুফুর ৬০ বছরের সংসারজীবনে অনেক মিল-মহব্বত ছিল। ফুফুর মৃত্যুর খবর শোনার পর ফুফা চিৎকার দিয়ে বলছিলেন, “তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলা, আমিও তোমার কাছে আসতেছি।” পরের দিন সকালে স্ত্রীর মরদেহ দেখার আগেই তিনিও মারা যান। সবাই তাঁদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বার্ধক্যের নানা জটিলতায় অসুস্থ হয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জাহানারা বেগম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে ভেঙে পড়েন আবদুল কাদের। গতকাল সকালে পরিবারের লোকজন জাহানারার মরদেহ তাঁকে শেষবারের মতো দেখানোর জন্য আনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর আগেই সকাল সোয়া আটটার দিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আবদুল কাদের মারা যান। পরে গতকাল বেলা দুইটার পর আলাদিপুর ১ নম্বর কলোনি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা মাঠে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে জানাজা হয়। জানাজা শেষে আলাদিপুর ১ নম্বর কলোনি আশ্রয়ণ প্রকল্পসংলগ্ন কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে স্বামী-স্ত্রীকে দাফন করা হয়।

প্রতিবেশী খোরশেদ আলম বলেন, বেঁচে থাকতে এই দম্পতি সব সময় কামনা করতেন তাঁদের মৃত্যু যেন একসঙ্গে হয়, পাশাপাশি কবরে থাকতে পারেন। আল্লাহ তাঁদের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক বলেন, স্বামী-স্ত্রীর একই দিনে স্বাভাবিক মৃত্যু তেমন দেখা যায় না। স্ত্রী, একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ ও নাতিদের নিয়ে তাঁদের সংসার ছিল।