পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রমিকেরা বলছেন, প্রকল্প এলাকার ভেতরে প্রচুর মশা। মশার কামড়ে তাঁরা অতিষ্ঠ। এ কারণেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা। তবে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও রূপপুর প্রকল্পসহ জেলার কোথাও এডিসের লার্ভা নেই বলে দাবি করেছেন সিভিল সার্জন মনিসর চৌধুরী। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাঁরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
জেলার দুটি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮০ ভাগের বেশি প্রকল্পের শ্রমিক। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও ২৫ জন। এ ছাড়া ৪০ জন বিদেশি নাগরিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ জনই রূপপুর প্রকল্পের শ্রমিক। গতকালও ১০ জন ভর্তি রয়েছেন। ৯ জনই প্রকল্পের শ্রমিক।
সিভিল সার্জন মনিসর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের খবর পেয়ে তাঁরা প্রকল্পের আবাসিক এলাকা গ্রিন সিটিসহ কয়েকটি জায়গা থেকে লার্ভা সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কোথাও এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়নি। মূল প্রকল্প এলাকায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। কর্তৃপক্ষ চাইলে তাঁরা মূল প্রকল্প এলাকা থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পারেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল হাসপাতালে প্রথম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। তিনি ঢাকাফেরত রোগী ছিলেন। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকাফেরত কয়েকজন চিকিৎসা নিয়েছেন। ২৯ আগস্ট থেকে রূপপুর ও আশপাশের এলাকার রোগীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করেন। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৪১ দিনে মোট ১৪৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল ভর্তি ছিলেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনই রূপপুর প্রকল্পের শ্রমিক।
গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মেডিসিন ওয়ার্ডে পৃথকভাবে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। তাঁদের সবাই মশারির ভেতরে। অনেকের হাতে স্যালাইন লাগানো। এ অবস্থায় স্বজনেরা কয়েকজনকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসমা খান বলেন, শুধু জেনারেল হাসপাতালেই নয়, তাঁদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ জনই রূপপুর প্রকল্পের শ্রমিক। গতকালও ১০ জন ভর্তি রয়েছেন। ৯ জনই প্রকল্পের শ্রমিক। সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আসমা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোগীদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রকল্প থেকেই ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। কারণ, প্রকল্পের বাইরে ঈশ্বরদী শহর থেকে আমরা তেমন কোনো রোগী পাইনি।’
জেলা সদরের মালিগাছা গ্রামের আকাশ হোসেন রূপপুর প্রকল্পে ‘নিকিম’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ফোরম্যান। তাঁর দলে ১২ জন কর্মী আছেন। পর্যায়ক্রমে ১২ জনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনিও ছয় দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আকাশ জানান, ১৫ দিন আগে তাঁদের কোম্পানির রুবেল নামের এক শ্রমিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
আকাশের দাবি, প্রকল্প এলাকার কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে। সেখানে প্রচুর মশা আছে। মশার কামড়েই তাঁরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকায় দু-এক দিন পরপর একবার করে স্প্রে করে। সেটা আরও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
রূপপুর গ্রামের শ্রমিক আরিফ হোসেন বলেন, ‘সকালের দিকে মশা বেশি কামড়ায়। তবে রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশা কমে যায়।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, মূল প্রকল্পের দায়িত্বে আছে ‘এটমিস্টয় জয়েন স্টক কোম্পানি’ নামের রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের অনুমতি ছাড়া কেউ মূল প্রকল্পে ঢুকতে পারেন না। প্রকল্পের ভেতরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের খবর জানার পরপরই তাঁরা প্রতিষ্ঠানটিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তাঁরা নিয়মিত স্প্রে করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।