বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় একটি সর্বজনীন কারিকুলাম করা গেলে সুবিধা হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেছেন, ‘বেশির ভাগ দেশ যারা ভালো করেছে, তাদের প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে ইউনিভার্সাল ইউনিফায়েড (সর্বজনীন ঐক্যবদ্ধতা) রয়েছে। আমরা যখন স্বাধীন হই, তখন আমাদেরও এমন একটি স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অর্ধশতাধিক বছর পরে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রায় ১৪টি ধারায় বিভক্ত হয়েছে। ফলে আমাদের সেই প্রাথমিক একীভূতকরণের স্বপ্ন এখন একটা ম্রিয়মাণ স্বপ্ন মাত্র। ফলস্বরূপ আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই বিচ্ছিন্নতার সূচনা তৈরি হচ্ছে। ঐক্যের ভিত্তি তৈরি হচ্ছে না।’
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণ-অভ্যুত্থান–উত্তর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তি’ শীর্ষক এক বিশেষ সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব দর্শন দিবস উপলক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করে দর্শন বিভাগ।
উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এর গ্রাফিতিগুলো। আমি আমাদের দেশের যে প্রান্তেই যাই, দেখি, দেয়ালজুড়ে রয়েছে এই গ্রাফিতিগুলো। আমার মনে হয়েছে, ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাগুলো এই গ্রাফিতিগুলোতে ভাষা পেয়েছে। আমি যখন এই গ্রাফিতিগুলো দেখি, তখন আমার মনে এই প্রশ্নের উদয় হয়, আমি যে দায়িত্ব নিয়েছি আমরা কি সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথেষ্ট করছি? আমি লক্ষ করছি, এখন দার্শনিকেরা দুনিয়া পাল্টানোর কাজে যুক্ত হয়েছেন। আমরা কি আশা করতে পারি, প্লেটোর আকাঙ্ক্ষার দার্শনিকের মতো একজন দার্শনিক পাব?’
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের সময় আমরা দল-মতনির্বিশেষে সবাই একত্র হয়ে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু আমরা গণ–অভ্যুত্থানের পরে দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন দল, মত এবং পতাকার মতাদর্শগত বিভাজন তৈরি হয়েছে। মানুষের মতাদর্শিক ভেদ থাকবেই, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মতাদর্শিক ভেদগুলো একান্তবাদের দিকে যায়। মৌলিক অধিকারগত চাহিদা ও মতাদর্শের সমন্বয় হলে রাষ্ট্র সংস্কার সফল হবে বলে আমি মনে করি।’
দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ মঈনুল আলম নিজার। আলোচক হিসেবে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক প্রমুখ।