ফরিদপুরে ৪৫ হাজার টাকায় মুজিব বর্ষের ঘর বিক্রি

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্প। ওই প্রকল্পের একটি ঘর টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন এক উপকারভোগী
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১টি ঘর ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন এক উপকারভোগী। উপজেলার লস্কারদিয়া ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটে।

ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ নম্বর ঘরটি ভূমিহীন হিসেবে বাঘুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা রিপন মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী বিথি বেগমকে বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তাঁরা ঘরটি ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে একই গ্রামের রাশেদ মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগমের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে লিখিতভাবে ঘরটি কিনে নিয়ে বর্তমানে ওই ঘরে বসবাস করছেন ওই দম্পতি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঘুটিয়া গ্রামের ২০ শতাংশ খাস জমির ওপর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০টি ঘর বানায় সরকার। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ঘরগুলো ১০ জন সুবিধাভোগীর মধ্যে বিতরণ করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও নগরকান্দার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেতী প্রু। সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বাঘুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। এর মধ্যে রিপন মোল্লা ঘরটি ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ মে রাশেদ মোল্লার কাছে হস্তান্তর করেন।

টাকা দিয়ে ঘর কিনে বসবাসের কথা স্বীকার করেন রাশিদা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রিপনের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘরটি তাঁরা কিনে নিয়েছেন।

তবে সরকারি ঘর বরাদ্দ পেয়ে বিক্রি করে দেওয়া রিপন মোল্লার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

স্ট্যাম্পের মাধ্যমে লিখিতভাবে ঘরটি কিনে নিয়ে বর্তমানে ওই ঘরে বসবাস করছেন বাঘুটিয়া গ্রামের রাশেদ মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগম

ইউএনও ইমাম রাজী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ভূমিহীন ব্যক্তিদের জমিসহ ঘর দিয়েছে, কিন্তু তা বিক্রি করার অধিকার তাঁদের দেয়নি। কেউ সরকারি ঘর বিক্রি করলে তিনি অপরাধ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও ইমাম রাজী আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করার কাজ শুরু করেছি। যাঁরা ঘর বরাদ্দ পেয়ে বসবাস করছেন না বা বিক্রি করেছেন, তাঁদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ভূমিহীনদের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হবে।’

এদিকে টাকার বিনিময়ে সরকারি ঘর বিক্রি করায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্য নিবাসীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ওই প্রকল্পের উপকারভোগী ফরিদা বেগম বলেন, ‘সরকার ঘর বানিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে বরাদ্দ দিয়েছে। সেই ঘর টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব। সরকার তো ঘর বিক্রি করার জন্য দেয়নি। সরকার আমাদের মতো অসহায়দের বসবাসের জন্য ঘর দিয়েছে।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিবাসীরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ভবিষ্যতে কেউ যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে না পারেন, সেই দাবিও জানান তাঁরা। ফরিদপুরে প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৪৮০টি ২ কক্ষবিশিষ্ট আধা পাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে নগরকান্দায় হস্তান্তরিত হয় ১০৫টি। ২ শতাংশ খাস জমির ওপর নির্মিত প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।