নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রাখায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম সড়কের কয়রার মদিনাবাদ এলাকায়
নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রাখায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম সড়কের কয়রার মদিনাবাদ এলাকায়

কয়রা-বেতগ্রাম সড়ক

৩৭৯ কোটির টাকার প্রকল্প ‘খোঁড়াখুঁড়িতেই’ সীমাবদ্ধ 

সড়কে চলাচল করতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কাজ অসমাপ্ত রেখে ১৭৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয় ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ সাড়ে ৪ বছর ধরে কেবল ‘খোঁড়াখুঁড়িতেই’ সীমাবদ্ধ আছে। সড়কটিতে দৃশ্যমান কাজ না হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ১৭৮ কোটি টাকা তুলে নিয়ে কাজ বন্ধ রেখেছে। অসমাপ্ত স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় ঝুঁকি-দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কে কাজের নামে শতকোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। সড়ক সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করা। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই করা হয়নি। প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কের কোথাও মানসম্মত কাজ হয়নি। দু–এক জায়গায় পুরাতন কার্পেটিংয়ের ওপর নতুন করে কার্পেটিং করা হলেও কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। চার বছর ধরে সড়কে চলাচল করতে গিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। 

খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মধ্য দিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার বেতগ্রাম পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটারের সড়কটি খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দ ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দের ১৭৮ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। ৫টি প্যাকেজে বিভক্ত এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ছিল সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ, কালভার্ট নির্মাণ, এক শ মিটার নদী শাসন, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। 

সম্প্রতি দেখা গেছে, কয়রা সদর থেকে দেয়াড়া পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার, দক্ষিণ নলতা, খলিলনগর, গোনালী, মালোপাড়া, মেলাবাজার এলাকা এবং সড়কের ২৭টি বাঁকের স্থানে কাজ অসমাপ্ত আছে। কোথাও পিচঢালাই দেবে গেছে। সড়কের দুই পাশের গাইড ওয়ালও মাটির চাপে বেঁকে যেতে দেখা গেছে।

২০২০ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারের আবেদনে সময় বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এতেও কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখন আর কাজটি তারা করতে চাইছে না। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৪ দশমিক ৫০ ভাগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প–সংশ্লিষ্টরা।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের আস্থাভাজন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাগিয়ে নিয়েছিল। তাঁরা মানসম্মতভাবে কাজটি না করে এবং অসমাপ্ত রেখে টাকা তুলে নিয়েছে। ফলে সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

মোজাহার এন্টারপ্রাইজের পক্ষে প্রকল্পটি দেখাশোনা করেন হুমায়ূন কবির নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের ৩৪টি বাঁক সরলীকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণে জটিলতায় সময়ক্ষেপণ হয়েছে। আমরা কাজ করে টাকা নিয়েছি। অতিরিক্ত টাকা তো নিইনি। নানা কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে কাজটি আর করা সম্ভব হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ নতুন টেন্ডার আহ্বান করবে বলে শুনেছি।’

সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত বলেন, প্রকল্পের পাঁচটি প্যাকেজের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি ওয়ার্ক প্যাকেজের (ডব্লিউপি) কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করেছে বলে মনে হয়েছে। সে হিসেবে আগের যিনি প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন তিনি অর্থ ছাড়ের সুপারিশ করেছিলেন।

এ সড়ক পথে যাতায়াতকারী বাস চালক সেলিম হোসেন বলেন, সড়কজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। ৬৫ কিলোমিটার রাস্তায় দুই-তিন কিলোমিটার পর পর দুর্ভোগ। এর চেয়ে প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কটি দিয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা যেত।