‘চৌধুরী বংশ উচ্ছেদ করতে না পারলে রিজাইন দেব’

চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমর
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী ওরফে বিরুর বংশ সোনারগাঁ থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমর। ভোটে বিজয়ী হলে দুই মাসের মধ্যে ‘চৌধুরী বংশ’ উচ্ছেদ করতে না পারলে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেবেন বলেও জানান তিনি।

গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নে একটি নির্বাচনী উঠান বৈঠকে এমন বক্তব্য দেন বাবুল ওমর। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

বক্তব্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি যদি পাস করি, আর আবদুল্লাহ আল কায়সারের (সংসদ সদস্য) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই। তাহলে দুই মাস পরে যদি এই চৌধুরী বংশ উচ্ছেদ না করতে পারি, আমি রিজাইন দেব।’

বাবুল ওমর সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনি আনারস প্রতীকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর বিপরীতে ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম। সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার কাগজে–কলমে নির্বাচনে প্রার্থী হলেও তাঁরা প্রচারের মাঠে নেই।

সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থন পাচ্ছেন বাবুল ওমর। অপর দিকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য মোবারক হোসেনের ছেলে এরফান হোসেন দ্বীপসহ আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন পাচ্ছেন মাহফুজুর রহমান কালাম।

উঠান বৈঠকে দেওয়া সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমরের বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে

আবু জাফরের উদ্দেশে বাবুল ওমর তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘খেলা হবে বিরুর সাথে আমার সাথে। আমি খেলব একা। আমার নাম বাবু।’ ভোটারদের উদ্দেশে ভোট চেয়ে বাবুল বলেন, ‘আমি জিতলে আমার পাঁচ বছর লাগব না। আমি হেরে ঠিক কইরা ফেলমু এক মাসে। এমনিতেই তো ঠিক কইরা ফেলছিলাম, আল্লাহ জানে বাঁচাইসে। লুঙ্গি রাইখা দিছিলাম। আমি তো তার বাড়ির সামনেই হুমকি দিলাম। তার যদি বুকের পাটা থাকে আমার বাড়ির সামনে মিছিল করতে বইলেন।’

উঠান বৈঠকে উপস্থিত থাকা স্থানীয় যুবলীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে জামপুর ইউনিয়নের পেচাইন এলাকায় উঠান বৈঠকটি হয়। বৈঠকের স্থানটি ছিল আবু জাফর চৌধুরীর বাড়ির ৫০০ গজের মধ্যে। জামপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সানাউল্লাহ, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম, সোনারগাঁ থানা-যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান শরীফ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে সমর্থন দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে আবু জাফরকে নিয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন বাবুল ওমর।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার রাতে ও আজ শুক্রবার সকালে বাবুল ওমরের মুঠোফোনে ফোন করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে আবু জাফর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। এমন বক্তব্য সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক মাঠকে অস্থির করে তুলবে। দল কাউকে কোনো প্রতীক দেয়নি। ফলে আমরা যে কেউ যে কারও জন্য নির্বাচন করতে পারি। জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে আমি কালাম ভাইকে সাপোর্ট দিয়েছি। কালাম ভাইকে কেন সাপোর্ট দিলাম, সে কারণে ওই প্রার্থী (বাবুল ওমর) এমন আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি দল এবং প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাইব।’

বাবুল ওমরের এমন বক্তব্য ভোটাররা ভালোভাবে নেননি বলে মন্তব্য করেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, রাজনীতিতে এটা অসভ্যতা। এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য জনগণ ভালোভাবে নেননি। একজন প্রার্থী জয়ের আগেই এমন বেপরোয়া বক্তব্য দিচ্ছেন, তিনি বিজয়ী হলে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠবেন, সেটা ভোটাররা আন্দাজ করতে পারছেন।