কুষ্টিয়ায় ঋণ প্রদানের আগের দিন গ্রাহকদের সঞ্চয় নিয়ে লাপাত্তা কথিত এনজিও

ঋণ বিতরণকারী ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যানার
ছবি: প্রথম আলো

সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার সঞ্চয় নিয়ে লাপাত্তা কথিত একটি সংস্থা (এনজিও)। গত মঙ্গলবার ঋণের টাকা বিতরণ করার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। ভুক্তভোগীরা জানান, ঋণ বিতরণের আগের দিন থেকে উধাও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

প্রতিষ্ঠানের নাম ‘নীড় ফাউন্ডেশন’। ভুক্তভোগীরা বলেন, অল্প সঞ্চয় ও সুদে অধিক ঋণ দেওয়ার কথা বলেছিলেন নীড় ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। তাঁদের টার্গেট ছিল ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ী। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে সঞ্চয় নিয়েছে এনজিওটি।

কুমারখালী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জহুরা খানম বলেন, কোনো এনজিওর ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত করতে হলে সমবায়ের অনুমতি লাগে। নীড় ফাউন্ডেশন নামের কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অনুমোদন নেয়নি। এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালী পৌরসভার কাজীপাড়া টিএনটি কার্যালয়ের সামনে লাভলী খাতুনের দোতলা পাকা বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেয় নীড় ফাউন্ডেশন। ছয়জন ব্যক্তি সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাঁরা উপজেলার আলাউদ্দিন নগর, যদুবয়রা, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকার ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ীদের টার্গেট করেন। ওই সব ব্যবসায়ীদের অল্প সঞ্চয়ে বেশি ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামানত সংগ্রহ করেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পরিচয় দেওয়া হাবিবুর রহমান ও তাঁর সহকারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চক্রটি প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার সঞ্চয় ও জামানত গ্রহণ করে। ৭ আগস্ট ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু ঋণ না দিয়ে আগের দিন গত সোমবার বিকেলেই চক্রটি পালিয়ে যায়।

আজ রোববার সকালে টিএনটি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এনজিওর সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়েছে। গেটে তালা লাগানো। কয়েকজন ভুক্তভোগী বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের দাবি, এ প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত বাড়ির মালিক লাভলী খাতুনও।

যদুবয়রা জয়বাংলা বাজারের পেঁয়াজ ও পাট ব্যবসায়ী আবদুল মোমিন ফারাজী বলেন, কিছুদিন আগে নীড় ফাউন্ডেশন নামের এনজিও থেকে কয়েকজন তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁকে ৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় চেয়েছিলেন। তিনি ২৫ হাজার ৭২৫ টাকা জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁর ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সোমবার বিকেলে এনজিওর কার্যালয় দেখতে আসেন মোমিন। দেখেন সবাই পালিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য, বাড়ির মালিকের যোগসাজশে এনজিও নামে চক্রটি এ প্রতারণা করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি দোকানের কর্মচারী হৃদয় হোসেন বলেন, তিনি ২ লাখ টাকা ঋণের জন্য ১৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার ঋণ আনতে গিয়ে জানতে পারেন এনজিওর লোকজন পালিয়েছেন। আলাউদ্দিন নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। গত রোববার সকালে দুই লাখ ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। অফিসে গিয়ে তিনি দেখেন দরজায় তালা লাগানো।

প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাড়ির মালিক লাভলী খাতুন। তিনি বলেন, ১০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়েছিলেন নীড় ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও ম্যানেজার হাবিবুর রহমান। চুক্তিনামা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি চাওয়া হলে তাঁরা পালিয়ে যান।
সংস্থার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক পরিচয় দেওয়া হাবিবুর রহমানের মুঠোফোন কল দিলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকিবুল ইসলাম বলেন, বাড়িওয়ালা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। গ্রাহকেরা অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে কুমারখালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও আমিরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।