নিটারের ১৪ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদত্যাগসহ নানা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

নিটারের ১৪ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। সোমবার দুপুরে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায়
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) শিক্ষার্থীরা ১৪ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। উপজেলার কহিনুর গেট এলাকায় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে গতকাল রোববার বিকেল থেকে তাঁরা এ বিক্ষোভ শুরু করেন। গতকাল সারা রাত বিক্ষোভের পর আজ সোমবার সারা রাত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান নিটারের সাবেক আ্যাডভাইজার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে নভেম্বরে প্রশাসনিক কাজে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠনের পর মিজানুর রহমানের অনুসারী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ভুক্তভোগীদের ডেকে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ প্রত্যাহারে বাধ্য করেন। পরে এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে জানাতে চাইলেও বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বন্ধ থাকা ক্যাম্পাস গত ৩১ আগস্ট খুলে দেওয়া হয়। পরদিন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিভাগের ৭ জন শিক্ষক, ৪ জন কর্মকর্তা ও ৩ জন কর্মচারীর পদত্যাগ দাবি; আবাসন–সংকট নিরসন, শিক্ষক নিয়োগ, ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনাসহ ক্যাম্পাস পুনর্গঠনের নানা দাবি জানান। ওই দিন রাতে ১৪ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামসহ একটি তালিকা নিটার কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিটার কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তাঁরা অব্যাহতি নিয়েছেন এমনটি জানার পর শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ‘অভিযোগ স্বীকার করে’ ওই শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদত্যাগের দাবি জানান। গতকাল বিকেলে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ চলমান অবস্থায় আজ দুপুর ১২টার দিকে নিটারের গভর্নিং বডির সদস্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল হক প্রতিষ্ঠানটিতে আসেন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের মৌখিক আশ্বাস দেন। তবে শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

এদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন চত্বরের মূল ফটক আটকে দেওয়ায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কেউই ক্যাম্পাসের বাইরে বের হতে পারছেন না। নিটারের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ছোটখাটো নানা দাবি প্রশাসনকে জানাতে চেয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যর্থ হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলোর কোনো গুরুত্ব দেয়নি, উল্টো তারা শিক্ষার্থীদের পরিবারের কাছে অভিযোগ দেওয়াসহ অভিভাবকদের ডেকে এনে হয়রানিসহ নানাভাবে অপদস্থ করে। এ কারণে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। আমরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষক-কর্মচারীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি। তাঁরা পদত্যাগ করার পর ক্যাম্পাস পুনর্গঠনে যেসব দাবি রয়েছে, সেসব কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরব।’

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘হলে ছোট একটি কক্ষে আটজন করে থাকতে হয়। চারতলা ছাত্রী হলের নিচতলায় ছাত্রীরা থাকে, দোতলা ও তিনতলার ভেতর পুরুষ শিক্ষকদের কোয়ার্টার রয়েছে। এতে ছাত্রীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তুচ্ছ ঘটনায় আমাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’ নুসরাত আরও বলেন, বিভিন্ন ছোটখাটো ঘটনায় অভিভাবককে ফোন করে চারিত্রিক বিষয়ে কটুকথা বলা, পোশাক নিয়ে কুমন্তব্য করাসহ মানসিক নির্যাতন করা হয়। ক্যাম্পাসে ডেকে এনে তাঁদের অপমান করা হয়।

এসব বিষয়ে নিটারের রেজিস্ট্রার ইকবাল রেজা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রোববার রাতে ওই ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। শিক্ষার্থীদের আরও কিছু দাবি রয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।