ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনায় নিহত ১৭

হালকা যানের লাইসেন্স নিয়ে বাস চালাচ্ছিলেন চালক

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের কাছে শনিবার সকালে যাত্রীবাহী বাস পুকুরে পড়ে যায়
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনাকবলিত ‘‌বাশার স্মৃতি’ নামের যাত্রীবাহী বাসের চালক মোহন খান (৪০) এক বছর আগে সুপারভাইজার থেকে চালকের দায়িত্ব পান। তিনি হালকা যান (মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার) চালানোর লাইসেন্স দিয়ে বাস চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ঝালকাঠি-পিরোজপুর জোনের সহকারী পরিচালক ও জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য মাহাবুবুর রহমান বলেন, মোহনের ২০২০ সালে ইস্যু করা হালকা মোটরযান চালানোর লাইসেন্স ছিল। বরিশাল থেকে ইস্যু করা প্রাথমিক ড্রাইভিং লাইসেন্স এটি। তিন বছর পরে ভারী লাইসেন্স পেলে তিনি বাস চালাতে পারতেন।

এদিকে মোহন হাওলাদার ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য নন বলে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান।

তদন্ত কমিটির সদস্য মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুর্ঘটনায় আহত যাত্রী, ঘটনাস্থলের লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাসটির ছাদে ও ভেতরে অতিরিক্ত যাত্রী থাকার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে সহকারীর কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় চালকও বাঁ দিকে ঘুরে সেই তর্কাতর্কিতে যোগ দেন। তখন গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। বাসটি পুকুরে পড়ে যায়।’

ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৫২ আসনের বাসটি খুলনা-বরগুনা রুটে চলাচলের অনুমতি থাকলেও নিয়ম ভেঙে তা ভান্ডারিয়া-বরিশাল রুটে চলাচল করছিল। ২০১১ সালের মডেলের বাসটির ফিটনেসের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ আছে একই বছরের ৯ মে পর্যন্ত এবং রুট পারমিটের মেয়াদ আছে ২০২৫ সালের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

তবে ঝালকাঠি মালিক সমিতি বলছে, সমিতির সিদ্ধান্তে বরিশাল বিভাগের ৩২টি রুটেই মালিকপক্ষের সব গাড়ি চলাচল করতে পারবে।

ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মোহন আমাদের সংগঠনের সদস্য না হলেও বাসমালিক তাঁকে দিয়ে গাড়ি চালাতেন। মোহনকে দিয়ে গাড়ি না চালানোর জন্য আমরা মালিককে (আবুল কালাম) বলেছি। মোহন চালক ছিলেন না, তিনি বাশার স্মৃতি গাড়ির সুপারভাইজার। মালিক সেই মায়ায় পড়ে তাঁকে এক বছর আগে চালক পদে চাকরি দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে বাসটির মালিক আবুল কালামের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

বাস দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রশাসনের পর ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে।’

এদিকে ঘটনার দুই দিন পর পুলিশ বাদী হয়ে চালক মোহন হাওলাদারসহ তিনজনকে আসামি করে ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝালকাঠি সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুশংকর মল্লিক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় বাসচালক মোহন হাওলাদার, সুপারভাইজার ফয়সাল ওরফে মিজান ও বাসচালকের সহকারী আকাশ ওরফে বুলেটকে আসামি করা হয়েছে।

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন সরকার প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বাস দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা না করায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।

গত শনিবার সকালে যাত্রীবাহী ‘বাশার স্মৃতি’ বাস পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালের দিকে যাওয়ার পথে পুকুরে পড়ে ১৭ জন নিহত ও ৩৪ জন আহত হন।