নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোহেল রানার বাড়িঘর ভাঙচুর করে আসবাবপত্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। ওই ইউপি সদস্যের অভিযোগ, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন এ হামলা চালিয়েছেন।
আজ বুধবার বিকেলে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সোহেল রানা সদ্য বিলুপ্ত ব্রাহ্মন্দী ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। জাকির হোসেন ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।
ইউপি সদস্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাকির হোসেন। তাঁর দাবি, সোহেল মাদক ব্যবসায়ী। তা ছাড়া ২ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে জখম করেছেন তিনি। এসব কারণে গ্রামবাসী সোহেলকে ধাওয়া দিয়েছেন।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এর মধ্যে ২ অক্টোবর একদল দুর্বৃত্ত দেলোয়ারকে কুপিয়ে যখম করে। এ ঘটনায় জাকির হোসেন বাদী হয়ে সোহেল রানাকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেন। এর পর থেকে সোহেল এলাকার বাইরে ছিলেন। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আজ দুপুরের পর সোহেল এলাকায় ফেরেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বালিয়াপাড়া বাজারে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রায় ১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় মহড়া দেন। মহড়ার শেষ পর্যায়ে দেলোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত জাকির হোসেন লোকজন নিয়ে সোহেলকে ধাওয়া দেন। সোহেল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলে তাঁরা সোহেলের বাড়িঘর ভাঙচুর করে কিছু আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেন।
সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেনের ওপর হামলার সময় আমি কক্সবাজারে ছিলাম। সেখান থেকে শুনি, ওই ঘটনায় আমাকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরলে তারা রামদা, চাপাতি, চায়নিজ কুড়ালসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা চালায়। বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার পর তারা আমার পরিবারের নারী ও শিশুদের মারধর করে ঘরে থাকা প্রায় ১৩ লাখ টাকা ও আট ভড়ি স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়। এ সময় আড়াইহাজার থানা–পুলিশ সেখানে থাকলেও হামলাকারীদের বাধা দেয়নি।’
ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান, ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাজ্জাদ, যুবলীগ নেতা হালিম হাসান, আবুল হোসেন ও মো. বাবন হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ করেন সোহেল।
অভিযোগ অস্বীকার করে জাকির হোসেন বলেন, ‘সোহেল পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় তাঁর লোকজন দেলোয়ার হোসেনের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসী সোহেলের ওপর ক্ষুব্ধ। এর মধ্যে সে বেশ কয়েকবার আমাকে ফোন করে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়েছে। বুধবার সকালে হঠাৎ করেই সোহেল রূপগঞ্জের একদল অস্ত্রধারী সঙ্গে নিয়ে এলাকায় আসে। পরে অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে এলাকায় মোটরসাইকেল মহড়া দেয়। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন তাদের ধাওয়া দিয়েছে।’
পুলিশের সামনে হামলার অভিযোগ ঠিক নয় দাবি করেন আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি সদস্য রূপগঞ্জের অস্ত্রধারীদের নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করে নিয়ে আসে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে জানা গেছে, একদল দুর্বৃত্ত ইউপি সদস্যের বাড়িঘর ভাঙচুর করে দুটি তোশকে আগুন দিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাত আটটা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।