ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এখনো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা বলেন, বিকেল ৪টায় পানি ৫২ দশমিক ২০ মিটার উচ্চতায় উঠে যায়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে তাঁরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
এর আগে পাউবো ঢাকার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পানি বৃদ্ধির কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বুধবার সকালে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সন্ধ্যা নাগাদ সেখানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে বিকেলেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস পেয়ে আশপাশে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়ারজান নদী লাগোয়া বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং মাইকিং করে তিস্তাপারের মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলছি। ইতিমধ্যে অনেকেই পরিবার–পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নৌকা মজুত রাখা হয়েছে।’
টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনো ঘরবাড়িতে পানি না উঠলেও এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন।
পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা নদী লাগোয়া তিন গ্রামের মানুষজনকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ইউপির চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্রমতে, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। তিস্তা নদীর পানি গতকাল সকাল ৬টায় ৫১ দশমিক ৩৫ মিটার, দুপুর ১২টায় ৫১ দশমিক ৩৯ মিটার, বেলা ২টায় ৫১ দশমিক ৯০ মিটার এবং ৩টায় ৫২ দশমিক ৮ মিটার দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি সকাল থেকে তিস্তা নদী এলাকায় অবস্থান করছি। সকাল থেকে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে প্রচারণা চলছে। ইতিমধ্যে চর এলাকার মানুষজন তাঁদের গরু-বাছুর নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছেন। যাঁদের জমিতে আধপাকা ধান আছে, তাঁরাও ধান কেটে নিচ্ছেন।’
জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিমলা উপজেলা পরিষদকে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুত আছে।