মারুফ আহমেদ
মারুফ আহমেদ

বাঁশের চালে প্রোটিন বেশি, মানবদেহের জন্য উপকারী

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ‍উপজেলায় বাঁশগাছের ফুল থেকে দানাদার ধানসদৃশ জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। সেই ধানের চালে রান্না হচ্ছে ভাত-পায়েস-খিচুড়ি। সেই খাবার অনেকেই খাচ্ছেন। বাঁশ থেকে পাওয়া ধানসদৃশ দানা, এর পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মারুফ আহমেদের সঙ্গে।

প্রশ্ন

কয়েক দিন আগে বাঁশগাছ থেকে দানাদার ধানসদৃশ বীজ সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় এক কৃষক। মিলে ভেঙে চাল পেয়েছেন। নিজে খেয়েছেন, অন্যদের কাছে বিক্রিও করেছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মারুফ আহমেদ: বাঁশ হচ্ছে একধরনের গুল্মজাতীয় বৃক্ষ। ফাঁপা কাণ্ডবিশিষ্ট ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪০ প্রজাতির বাঁশ আছে। সচরাচর বাঁশের ফুল বা ফল হয় না। তবে বিশেষ প্রজাতির দুই ধরনের বাঁশে ৩০ থেকে ১০০ বছর পর ফুল আসে। মূলত ওই প্রজাতির বাঁশের জীবনচক্রের শেষ দিকে ফুলটা আসে। ফুল আসার পরই বাঁশগাছ মারা যায়। ফুল থেকে বীজ হয় এবং খোসা অপসারণ করে চাল পাওয়া যায়। সাধারণত এই চাল বাঁশের চাল নামেই পরিচিত।

প্রশ্ন

এই চাল খাদ্য হিসেবে কতখানি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ? আমাদের দেশে এই প্রজাতির বাঁশের চাষ করা সম্ভব?

মারুফ আহমেদ: সাধারণ চালের চেয়ে বাঁশের চালে প্রোটিনের মাত্রা বেশি এবং ফ্যাট কম থাকে। এ ছাড়া অ্যামাইলোজ স্টার্চের পরিমাণ ভালো থাকায় এটা মানবদেহের জন্য উপকারী। এই ভাত কোলেস্টেরল কমানো, হাড়ের ব্যথা কমানো ও অ্যান্টিডায়াবেটিক হিসেবে কাজ করে বলে গবেষণায় জানা গেছে। ভারতের ত্রিপুরাসহ কিছু কিছু জায়গায় সচেতনভাবে এই প্রজাতির বাঁশের আবাদ করা হয়। ওই বীজ থেকে বাঁশগাছের চারা হওয়ার কথা। যদি সেটা করা সম্ভব হয়, তাহলে চাষাবাদ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন

স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা বলছেন, ফুলবাড়ীর ওই গ্রামে ৫০ বছর আগেও একবার বাঁশের চালের ভাত খেয়েছেন তাঁরা।

মারুফ আহমেদ: প্রথমেই বলেছি, ৩০ থেকে ১০০ বছর, অর্থাৎ ওই বাঁশের জীবনচক্রের শেষ দিকে বীজ দিয়ে বাঁশগাছ মারা যায়। স্বাধীনতার পর বাঁশগাছ থেকে পাওয়া চাল দিয়ে মানুষ ভাত রান্না করে খেয়েছেন হয়তো।

প্রশ্ন

যেহেতু দীর্ঘ সময় পর ওই প্রজাতির বাঁশের বীজের দেখা পাওয়া গেল, বন বিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

মারুফ আহমেদ: এটা ঠিকই বলেছেন, এত লম্বা সময় পর বাঁশের বীজের দেখা পাওয়া গেল। আমি মনে করি, ওই বাঁশের প্রজাতি কী, গঠনবৈশিষ্ট্য কেমন—এসব নিয়ে গবেষণা যেমন হতে পারে, তেমনি যে বীজ পাওয়া গেল, সেটি নিয়েও গবেষণা হওয়া দরকার। ভূপ্রাকৃতিকভাবেই আমাদের মাটি উর্বর। যদি সত্যিকার অর্থেই বীজ থেকে চারা করা যায়, তাহলে একদিকে বাঁশের ঘাটতি যেমন মিটবে, অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময় পর ওই বাঁশ থেকে পাওয়া চাল খাদ্যঘাটতিতে সহায়ক হবে।