ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মাটিচাপা পড়ার ১২ ঘণ্টা পর দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের বিশুতারা বিল এলাকা থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
নিহত দুজন হলেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার সুবলিয়াপাড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৫) ও তাঁর চাচাতো ভাই আলী মনসুর (৩৫)। আলী মনসুরের বাবার নাম আশাদ আলী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেলোয়ার হোসেন তাঁর ছোট ভাই আতিকুল ইসলাম (২৩) ও চাচাতো ভাই আলী মনসুর মিলে সাতদিন ধরে একটি খননযন্ত্র দিয়ে কালীকচ্ছ ইউনিয়নের বিশুতারা গ্রামের বিল এলাকায় হাসান আলীর ৬০ শতক জমিতে মাটি কাটছিলেন। জমির মাটি কিনেছিলেন চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের হুমায়ুন মিয়াসহ কয়েকজন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এলাকার লোকজনের জমির মাটি কেনাবেচা করে আসছিলেন। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জমির মাটিকাটার একপর্যায়ে গর্তের পাড় ভেঙে বর্ষার পানি ঢুকতে থাকে। পানিতে ঠেকাতে যান খননযন্ত্রের চালক দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগী আলী মনসুর। তখন তাঁরা পানির তোড়ে গর্তে পড়ে যান। তাঁদের উদ্ধার করতে এগিয়ে যান আতিকুল ইসলাম। তিনিও গর্তে পড়ে যান। পরে আতিকুল ইসলাম প্রাণে রক্ষা পেলেও অপর দুই শ্রমিক মাটি চাপা পড়ে নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সরাইল উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালান। গভীর রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও দুই শ্রমিকের সন্ধান মেলেনি। পরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের উপপরিচালক লিটন দাসের নেতৃত্বে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আতিকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই বছর দেড়েক আগে বিয়া করছে। কয়েক মাস আগে তার একটি সন্তানও হইছে। রাইতে কাম করতে গিয়া আমার ভাই ও চাচাতো মইরা গেল। আমি কোনো মতে বাঁইছা গেছি।’
ঘটনার পরপর হুমায়ুন মিয়া ও তাঁর লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে হুমায়ুনকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনটি নম্বরও বন্ধ। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনাজনিত কারণেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। লাশ দুটি পুলিশের জিম্মায় রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেসবা উল আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যেখানেই অবৈধভাবে জমি খননের ঘটনা ঘটে, সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওই জমিতে পুকুর খনন করার অনুমতি ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে। অনুমতি না নিয়ে থাকলে জমির মালিকের বিরুদ্ধে আনইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।