কাজ চলছে ঢিমেতালে

এলজিইডির ‘পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা।

সুনামগঞ্জে যাদুকাটা নদীর ওপর মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ সাড়ে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। ফলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন লোকজন। সম্প্রতি তোলা

সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর ওপর ‘শাহ আরেফিন (রা.)-অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতু’র নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের মার্চ মাসে। জেলার সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজের নির্ধারিত সময় ছিল আড়াই বছর। কিন্তু সাড়ে পাঁচ বছর পার হলেও সেতুর কাজ এখনো শেষ হয়নি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, কাজ চলছে ঢিমেতালে। গতি কম। এই গতিতে কাজ হলে আরও এক বছরেও শেষ হবে কি না, সন্দেহ আছে। তবে সংশ্লিষ্টরা কাজ শেষ না হওয়ার পেছনে করোনা, বন্যাসহ নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। তাদের দাবি, ৭৬ ভাগ কাজ শেষ, আগামী জুনের আগেই কাজ শেষ হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ‘পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা। সেতুর কাজের সময়সীমা ছিল ৩০ মাস। সে অনুয়ায়ী ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

এই ব্রিজটা খুব দরকার। কিন্তু শুরুতে যেভাবে কাম অইছিল। এখন সেই গতি নাই। কেউ কুনতা খয় না। কাম ত আটকে আছে।
মাসুত মিয়া, বাসিন্দা, লাউড়েরগড় গ্রাম, তাহিরপুর

এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুর ১৫টি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৫৩টি বসানোর কাজ শেষ। বাকিগুলো বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজও চলমান আছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, জেলার তাহিরপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীর ওপর যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে, তার এক পারে বাদাঘাট ইউনিয়নের গড়কাটি ও অন্য পারে বিন্নাকুলী গ্রাম। এই নদীর তীরেই শাহ আরেফিন (রা.)-এর আস্তানা ও পাশের গ্রামে শ্রীশ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর জন্মস্থান। পাশেই রয়েছে একটি সীমান্ত হাট। নদীর পশ্চিম তীরে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুলবাগান ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বড়গোপ টিলা। এর পাশে টাঙ্গুয়ার হাওর, লাকমাছড়া, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক), টেকেরঘাট। এসব স্থানে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসেন।

এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় থাকা বগছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী শুল্ক স্টেশন রয়েছে। সুনামগঞ্জ শহর থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ওই এলাকায় যাতায়াত করেন। এই সেতুটি হলে পর্যটকদের পাশাপাশি জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হবে। পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে ওই এলাকায়। সেতুর ওপর দাঁড়ালেই চোখের সামনে ধরা দেবে উত্তরের মেঘালয় পাহাড়। একই সঙ্গে প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের। এই সেতু স্থানীয় ব্যক্তিদের মনে আশা জাগালেও এখন সেতুর কাজের ধীরগতি নিয়ে অনেকেই হতাশ।

স্থানীয় লাউড়েরগড় গ্রামের বাসিন্দা মাসুত মিয়া বলেন, ‘এই ব্রিজটা খুব দরকার। কিন্তু শুরুতে যেভাবে কাম অইছিল। এখন সেই গতি নাই। কেউ কুনতা খয় না। কাম ত আটকে আছে।’

একই গ্রামের বাসিন্দা আলম সাব্বির বলেন, এই সেতু চালু হলে তিনটি উপজেলার মানুষ উপকৃত হবে। যাদুকাটা নদীর খেয়া পারাপারে প্রায় প্রতিবছরই দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ মারা যায়। এ থেকে মানুষ বাঁচবে। পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ পর্যটনের বিকাশ ঘটবে। কিন্তু সেতুর কাজের ধীরগতিতে মানুষ হতাশ।

সেতুর পাশেই বাদাঘাট বাজার। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মাসুক মিয়া জানান, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকার লাখো মানুষ এই সেতু নির্মাণের ফলে উপকৃত হবেন। এখন সেতুর অভাবে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহান। সেতু চালু হলে এই ভোগান্তি থাকবে না। মানুষ সহজেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবেন।

এলজিইডির তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফ উল্লাহ খান বলেন, কাজ চলছে। ঠিকাদারকে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘করোনা, বন্যাসহ নানা কারণে সেতুটির কাজ সময়মতো শেষ করা সম্ভব হয়নি। ৭৬ ভাগ কাজ শেষ। দ্রুত কাজ শেষ করতে আমাদের চেষ্টা আছে।’

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, সেতুর কাজের ধীরগতির বিষয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ) সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলেছি। আগামী জুনের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে তারা (এলজিইডি) বলেছে। এর মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে।