ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মধুমতী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে রেলসেতু। গতকাল মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইলে
ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মধুমতী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে রেলসেতু। গতকাল মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইলে

মাগুরায় ট্রেন চলার স্বপ্নের পথে কাজ অর্ধেক শেষ

মাগুরাবাসীর স্বপ্নের একটি প্রকল্প মধুখালী-মাগুরা রেল প্রকল্প। এর মাধ্যমে মাগুরা জেলা প্রথমবারের মতো রেল–সংযোগের আওতায় আসবে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর ২২ মাসে এই প্রকল্পের ৪৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ফলে আগামী বছরের মধ্যে মাগুরায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছেন তাঁরা। তবে মাগুরা অংশে অধিগ্রহণ করা জমি এখনো বুঝে না পাওয়ায় কাজ কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের পরিচালক।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন প্রকল্প ২০১৮ সালে গ্রহণ করা হয়। চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তবে জমি অধিগ্রহণ ও করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মে মাসে। ওই বছরের ২৭ মে ভার্চু৵য়াল মাধ্যমে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

সরেজমিনে গত সোমবার মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন রেলসেতুর মাগুরা প্রান্তে দেখা যায়, পিলার নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পিলার দৃশ্যমান হয়েছে। মধুখালী অংশে পুরোনো রেললাইন সংস্কারের কাজ চলছে। ওই অংশে বেশ কিছু বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে মাগুরা অংশে দৃশ্যমান কাজ দেখা যায়নি। এ কাজের অংশ হিসেবে মাগুরার ঠাকুরবাড়ি এলাকায় নতুন একটি রেলস্টেশন নির্মাণ হওয়ার কথা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কিছু নির্মাণসামগ্রী এনে ফেলা হয়েছে। তবে রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।

প্রকল্পের পরিচালক আসাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। এখন দ্রুতগতিতে কাজ এগোচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়েনি। মধুমতী নদীতে রেলসেতুসহ পুরো প্রকল্পের ৪৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের মধ্যে এখানে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’ এখনো মাগুরা অংশে অধিগ্রহণ করা বেশির ভাগ জমি বুঝে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। এটাকেই এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এই কর্মকর্তা।

আসাদুল হক জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মধুখালী দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা, খুলনা এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে মাগুরা।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা অংশে রেল প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা জমির পরিমাণ ১০৭ একরের মতো। যার মূল্য প্রায় ১১৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে অধিগ্রহণ করা এসব জমির বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে চেক বিতরণ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই দফায় ১ দশমিক ৯৬ একর জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় দেড় কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণপ্রক্রিয়া কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। নানা জটিলতা কাটিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চেক বিতরণ শুরু করেছি। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা চাইলে এখন স্টেশনের কাজ শুরু করতে পারবে। ঈদের আগে আরও কিছু জমি তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ধাপে ধাপে রেললাইনের জমিও শিগগিরই বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, কামারখালী ও মাগুরা স্টেশন ইয়ার্ডে ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার লুপলাইন নির্মাণ, দুটি নতুন স্টেশন (কামারখালী ও মাগুরা) নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৪৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করছে কাজী নাবিল আহমেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। অপরদিকে মধুমতী নদীর ওপর ২ হাজার ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্যের রেলসেতু নির্মাণকাজ করা হচ্ছে ৪৪৯ কোটি টাকায়। এ কাজের ঠিকাদারি পেয়েছে মীর আক্তার কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। বাকি অর্থ ব্যয় হবে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজে।