পাথরঘাটায় জব্দ ১৬০ কেজি হরিণের মাংস এতিমখানায় বিতরণ

বরগুনার পাথরঘাটায় জব্দ করা হরিণের মাংস বিতরণ করছেন চরদুয়ানী নৌ–পুলিশ ফাঁড়ি ও পাথরঘাটা থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য। রোববার পাথরঘাটা থানার প্রধান ফটকে
ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবন-সংলগ্ন বরগুনার পাথরঘাটার বলেশ্বর নদ থেকে শনিবার গভীর রাতে একটি ট্রলারসহ ১৬০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেন চরদুয়ানী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। তবে এ ঘটনায় আইন অমান্য করে ওই হরিণের মাংস এতিমখানায় বিতরণের অভিযোগ উঠেছে চরদুয়ানী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও পাথরঘাটা থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে চরদুয়ানী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদারের নির্দেশে এ হরিণের মাংস বিতরণ করা হয়েছে। ইউএনও সুফল চন্দ্র গোলদারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরিণের মাংস এতিমখানায় বিতরণের সিদ্ধান্তও আমার নয়।’

হরিণের মাংস বিতরণে উপস্থিত ছিলেন চরদুয়ানী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম, ওই ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন, এসআই মো. সজীব, পাথরঘাটা থানার এসআই আবদুল জলিল, এএসআই মিজানসহ আরও দুই থেকে তিনজন পুলিশ সদস্য।

পাথরঘাটা বন বিভাগের বনরক্ষী ও সহকারী বন মামলা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরিণসহ বন্য প্রাণী বা এর মাংস জব্দ বা উদ্ধার করলে তা স্থানীয় বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এরপর বন বিভাগ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। হরিণের মাংস বিতরণ করা আইনত নিষেধ। তাই আমরা হরিণের মাংসে কেরোসিন ঢেলে নষ্ট করে মাটিচাপা দিয়ে রাখি। কিন্তু গতকাল রাতে চরদুয়ানী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা যে ১৬০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেছেন, তা বন বিভাগকে জানানো হয়নি।’

চরদুয়ানী নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বলেশ্বর নদে নিয়মিত টহলে চরদুয়ানী বাজারসংলগ্ন এলাকায় একটি মাছধরার ট্রলার থেকে কয়েকটি বস্তা নামানোর সময় নৌ পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেলে তিন থেকে চারজন হরিণশিকারি পালিয়ে যান। এ সময় ওই ট্রলারে তল্লাশি চালিয়ে ৪টি বস্তায় ১৬০ কেজি হরিণের মাংস পাওয়া যায়। এরপর ট্রলারটিসহ ওই হরিণের মাংস জব্দ করা হয়। পরে ওই হরিণের মাংস পাথরঘাটায় থানা ভবনের সামনে এনে ইউএনওর নির্দেশে বেশ কয়েকটি এতিমখানায় তা বিতরণ করা হয়।

জব্দ করা হরিণের মাংস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা

জব্দ করা হরিণের মাংস পাথরঘাটা থানা ভবনের সামনে বসে বিতরণ প্রসঙ্গে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি চরদুয়ানী নৌ পুলিশ সদস্যরা ওই হরিণের মাংস বিতরণ করেন। এ বিষয়ে আমি অবগত নই।’

এ বিতরণের মধ্য দিয়ে হরিণের মাংস খেতে মানুষদের প্রলুব্ধ করা হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজটি ঠিক হয়নি। আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে, হরিণ না বাঁচলে বাঘ বাঁচবে না, বাঘ না বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে না, আর সুন্দরবন না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। তাই আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হিসেবে কাজ করতে হবে।’