চরমোনাই দরবার শরিফে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। বৃহস্পতিবার দুপুরে
চরমোনাই দরবার শরিফে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। বৃহস্পতিবার দুপুরে

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না: চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘সরকার এবারও একতরফা, পাতানো নির্বাচন আয়োজন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এবারও এ ধরনের নির্বাচন আয়োজিত হলে আমরা কেউ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাব না। আপনারাও যাবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের চরমোনাই দরবার শরিফের শততম বার্ষিক মাহফিল উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এ কথা বলেন। চরমোনাই দরবারে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক এই মাহফিল শুরু হয় গতকাল বুধবার। আগামী শনিবার সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই আয়োজন।

সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা আগেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনে যাবে না। ২০১৪, ২০১৮ সালে আমরা দেখেছি, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি, যা হয়েছে তামাশা ও ধোঁকাবাজির নির্বাচন। তাই এই নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হবে না। আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাতে চাই, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। আমরাও যাব না, আপনারা কেউ যাবেন না।’

দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা ছিল যে শেষ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারবে কি না। আজ আমিরের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেই সন্দেহ, অস্পষ্টতা দূর হয়েছে।
এইচ এম সানাউল্লাহ, সভাপতি, ইসলামী যুব আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটি

সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দেশে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। আওয়ামী লীগের সীমাহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণে দেশ আজ চরম সংকটে পড়েছে। তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের দিল্লি সফরের সমালোচনা করে বলেন, ‘দিল্লি কি বাংলাদেশের রাজধানী? সেখানে গিয়ে কেন অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে? বাংলাদেশের জনগণ আর এক মুহূর্তও এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সুতরাং আমাদের আমিরের ঘোষিত দাবির আলোকে দ্রুততম সময়ে অবৈধ সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় দেশের চলমান সংকট আরও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা করছি।’

গাজী আতাউর সারা দেশ থেকে আসা ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখন প্রথম কাজ হলো, এই সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করা।’

ওলামা সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমিনুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি হাফেজ শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, জামিয়া ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম তিলপাপাড়া-ঢাকার মুহাতামীম ইউনুস ঢালী প্রমুখ।

বরিশালের চরমোনাই দরবার শরিফের শততম বার্ষিক মাহফিলে আসা ভক্ত-মুরিদ ও নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে

আমিরের ঘোষণায় উজ্জীবিত নেতা-কর্মীরা

আজ সন্ধ্যায় চরমোনাই দরবারের মাহফিলে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৩০টি দোতলা লঞ্চ চরমোনাই ঘাটে নোঙর করে আছে। এ ছাড়া অন্তত ৪০০ বাস মাহফিলস্থলের অদূরে দিনারের পুল এলাকায় অবস্থান করছে। এসব যানবাহনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ ভক্ত-মুরিদ ও নেতা-কর্মী অংশ নিয়েছেন।

মাহফিলে আসা কয়েকজন দলীয় কর্মীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই মাহফিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সারা দেশে ইসলামী আন্দোলনের লাখ লাখ কর্মী আগামী নির্বাচনে তাঁদের ভূমিকা কী হবে, এ নিয়ে দোটানায় ছিলেন। কিন্তু আজ দুপুরে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট বার্তা পাওয়া গেল। আমিরের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সারা দেশে দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী উজ্জীবিত হয়েছেন।

পটুয়াখালী থেকে আসা দলীয় কর্মী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই মাহফিল থেকে স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি যে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে দল যাবে না। দলের কোনো কর্মী এ ধরনের নির্বাচন হলে ভোটকেন্দ্রেও যাবেন না।’

পিরোজপুর থেকে আসা দলীয় কর্মী আর আমিন বলেন, ‘সারা দেশের ইসলামী আন্দোলনের লাখ লাখ কর্মীর অন্তরের কথা বলেছেন আজ দলের আমির। আমরা এমন একটি বার্তাই তাঁর কাছ থেকে চেয়েছিলাম।’

বরগুনার তালতলী উপজেলার আরেক কর্মী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এলাকায় ফিরে গিয়ে আমিরের এই বক্তব্য দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তুলে ধরব।’

ইসলামী যুব আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি এইচ এম সানাউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগেও আমাদের দলের শীর্ষ নেতারা ঢাকায় মহাসমাবেশে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা ছিল যে শেষ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারবে কি না। আজ আমিরের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেই সন্দেহ, অস্পষ্টতা দূর হয়েছে।’