নিম্নমানের সামগ্রীতে দুই মাসেই বেহাল সড়ক

লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভালুকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ রাস্তাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পান।

দুই মাসেই ভেঙে গেছে সড়ক। গত বুধবার ময়মনসিংহের ভালুকা সদর ইউনিয়নের দুলাল মুন্সির বিলপার এলাকায়

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় একটি সড়ক নির্মাণের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া হয়েছিল। ওই বাধা উপেক্ষা করে কাজ সম্পন্নের দুই মাসেই সড়কটি যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভালুকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ রাস্তাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পান।

ভাঙা সড়ক দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হবে। রাস্তাটি যাতায়াতের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারের বিলে সই করবেন না তিনি।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিলের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে পৌনে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ভালুকা সদর ইউনিয়নের কাঁঠালী মাঠের ঘাট থেকে মুক্তিযোদ্ধা সাহাবদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত ৬৮০ মিটার রাস্তা এইচবিবিকরণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে রাস্তাটি নির্মাণের কার্যাদেশ পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিকুর রহমান। কাজ শুরুর পর থেকে নিম্নমানের ইট ও বালুর পরিমাণ কম দেওয়াসহ নানা অনিয়ম করায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানান। ঠিকাদার ও শ্রমিকেরা এতে কর্ণপাত না করে তাঁদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল ভালুকা প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান পাঠানকে সঙ্গে নিয়ে সড়কটি পরিদর্শনে যান আবুল কালাম আজাদ। রাস্তায় ব্যবহৃত নিম্নমানের ইট, অপর্যাপ্ত বালু ও বিভিন্ন অনিয়ম দেখে ক্ষুব্ধ হন তাঁরা উভয়ই। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের সার্ভেয়ার শওকত হোসেন ও কার্য সহকারী দেলুয়ার হোসেনকে মুঠোফোনে রাস্তায় ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাঁরাও নিম্নমানের বলে জানিয়েছিলেন আবুল কালাম আজাদকে। পরে মানসম্পন্ন ইট ও পরিমাণমতো বালু দিয়ে রাস্তা নির্মাণ না হলে বিল দেওয়া হবে না বলে ঠিকাদারকে ডেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নিম্নমানের ইট ও বালুর পরিমাণ কম দেওয়ায় একাধিকবার কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার তাঁদের বাধা মানেননি। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে চেয়ারম্যান পরিদর্শনে এসে অভিযোগের সত্যতা পান। এরপরও ঠিকাদার এসবের তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শেষ করেন। ফলে দুই মাসেই সড়কটি যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার আশিকুর রহমান বলেন, রাস্তাটির দুই পাশেই খাদ। তাই একটু সমস্যা হয়েছে এবং বিল উত্তোলনের আগেই তা ঠিক করে দেওয়া হবে।

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কের কাজে অনিয়ম হওয়ায় বেশ কয়েকটি স্থান দেবে ভেঙে গেছে। ঠিকাদারের বিল আটকে দেওয়া হয়েছে। সঠিকভাবে ওই সড়কটি নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হবে না।