চিতলমারীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত অন্তত ১৬

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগ–যুবলীগ নেতা–কর্মীদের। আজ মঙ্গলবার সকালে
ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটের চিতলমারীতে বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কর্মসূচিকে ঘিরে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রামদা, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটাসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ বিএনপির। হামলায় আজ দুপুর পর্যন্ত বিএনপির ১৬ নেতা-কর্মী আহত ও জখম হয়েছেন বলে দাবি করেছে দলটি। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে একটি মোটরসাইকেলে।

বিএনপির এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলছে আওয়ামী লীগ। যদিও রামদা, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা নিয়ে চিতলমারী উপজেলা সদর বাজারে দলবদ্ধ হয়ে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের হেঁটে যাওয়ার একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন চিতলমারী সদর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম মুন্সি। ফেসবুকে ওই ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘বাজারে মহড়া চলছে, চিতলমারী যুবলীগ’। সকাল ১০টার কিছু আগে ছবিটি পোস্ট করার অল্প সময় বাদেই সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ওই ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম মুন্সি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে কোনো অস্ত্র ছিল না। এটা একটা ফালতু কথা।’

এদিকে সকাল থেকে এমন অবস্থায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে উপজেলাজুড়ে। ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে ফেলেন বাজারের অনেক ব্যবসায়ী। সকাল থেকে রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা।

দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যুবলীগ–ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার বাগেরহাটের চিতলমারীতে

চিতলমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আহসান হাবিব অভিযোগ করে বলেন, ‘জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভোলায় ছাত্রদল সভাপতিসহ দুজন নেতা খুন এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হামলার প্রতিবাদে আজ সকালে চিতলমারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আমাদের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। এই সমাবেশ বানচাল করতে দুই-তিন দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের নেতা-কর্মীদের হুমকি ও মারধর করে আসছেন।’

আহসান হাবিব বলেন, ‘গতকাল সোমবার রাতেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মহড়া দিয়েছেন তাঁরা। সমাবেশ বানচাল করতে তাঁরা সকাল থেকে হকিস্টিক, রামদা, লাঠিসোঁটাসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে উপজেলা সদরে মহড়া দিচ্ছেন। সকালে সাবেক ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম বাবুকে মারধর ও তাঁর মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছেন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া শাসক দলের হামলায় কৃষক দল নেতা শেখ মোহাম্মাদ আলী, যুবদল নেতা কামাল বিশ্বাস, বিএনপির নেতা মনিরুল ইসলামসহ আমাদের অন্তত ১৬ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আমরা এই ন্যক্করজনক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

উপজেলার আড়বুনিয়া এলাকায় যুবলীগের একটি মিছিলের মধ্যে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল নিয়ে ঢুকে পড়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ালে একপর্যায়ে তিনি মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যান। পরে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা ওই মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।
এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, চিতলমারী থানা

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবুল হোসেন খান। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে আজ উপজেলা যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিল ছিল। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি পালন করেছি। কোথাও বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীর ওপর হামলার প্রশ্নই ওঠে না। তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা। বিএনপির নিজেদের মধ্যে কোন্দল। সেই কোন্দলের দায় তারা আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে।’

এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘আজ শহীদ মিনার এলাকায় বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছিল। সেখানে পুলিশ ছিল, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এর মধ্যে উপজেলার আড়বুনিয়া এলাকায় যুবলীগের একটি মিছিলের মধ্যে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল নিয়ে ঢুকে পড়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ালে একপর্যায়ে তিনি মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যান। পরে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা ওই মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। তবে কোথাও হামলার কোনো ঘটনা শুনিনি।’

প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এমন কোনো অভিযোগ আমরা শুনিনি। মিছিলে অতি উৎসাহী হয়ে কেউ লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে থাকতে পারেন। অনেক জায়গায় জাতীয় পতাকা নিয়েও মিছিল করেছেন তাঁরা।’