আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন পর নিজের নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে গণসংযোগ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে ২০টি গাড়িবহর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নতুন করে রাজনীতিতে ফেরায় কালিহাতীতে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
জানতে চাইলে লতিফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচন করার জন্য আসিনি। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করবে। আমি মনে করি এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমি এসেছি।’
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একটি সভায় হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। তখন তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দেশে ফেরার পর তাঁকে কারাগারেও যেতে হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তিনি অবস্থান ধর্মঘট করেন। পরে নির্বাচন থেকে সরে যান। এ ঘটনার পর থেকে কালিহাতীতে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর পর তিনি কালিহাতীতে গণসংযোগ করেছেন।
লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারীরা জানান, সকালে ২০টি গাড়িবহর নিয়ে দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়ায় শাহান শাহ্ আদম কাশ্মিরীর মাজারে যান লতিফ সিদ্দিকী। সেখানে যাওয়ার পথে লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরের কয়েকটি গাড়িকে তাঁর ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকীর সমর্থকেরা আটকে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও এ বিষয়ে লতিফ সিদ্দিকী বা মুরাদ সিদ্দিকী কোনো মন্তব্য করেননি।
মাজার জিয়ারত শেষে কালিহাতীর এলেঙ্গা রিসোর্টে যান লতিফ সিদ্দিকী। বিকেল পর্যন্ত তিনি সেখানে অনুসারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকেলে মোটরসাইকেল এবং গাড়িবহর নিয়ে উপজেলার জোকারচর ও গোহালিয়া বাড়ি গ্রামে গণসংযোগ করেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে কালিহাতী উপজেলা সদরে তাঁর বাসভবনে গিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি।
এলেঙ্গায় লতিফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালিহাতীতে যারাই আওয়ামী লীগের লোক, স্বাধীনতার পক্ষের লোক, তাঁদের বলতে এসেছি, তোমরা সতর্ক হও, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হও। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি আঘাত হানার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছে আন্তর্জাতিক কিছু শক্তি। যারা ’৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিরোধিতা করেছে। তারা বাংলাদেশে তাদের মনমতো একটি সরকার গঠন করতে চাচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কালিহাতীতে লতিফ সিদ্দিকীর গণসংযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। অনেকেই মনে করছেন আগামী নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগে ফেরার বিষয়ে ওপর থেকে কোনো সংকেত পেয়েছেন। অবশ্য লতিফ সিদ্দিকী কোনো সংকেত পাননি বলে জানিয়েছেন। আবার অনেকে মনে করছেন, তাঁর ভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছে। সেই জোট থেকেও তিনি প্রার্থী হতে পারেন।
কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মালেক ভূঁইয়া বলেন, ‘লতিফ ভাই আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। যেকোনো কারণেই হোক এখন দলে নাই। উনি প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক। সরকারের সমর্থনে রাজনীতিতে এলে ওনাকে স্বাগতম। উনি অভিজ্ঞ মানুষ। উনিই ওনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে যাঁকে নৌকা দেওয়া হবে, আমরা তাঁর সঙ্গেই থাকব।’
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী নাই প্রায় ৯ বছর। ওনাকে ছাড়াই কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সব অঙ্গসংগঠন ঐক্যবদ্ধ। ওনাকে ছাড়াই বিএনপি-জামায়াতকে আমরা এক দিনের জন্যও মাঠে নামতে দিইনি। আমাদের কাউকে হায়ার (ভাড়া) করে আনতে হবে না। উনি দলের কেউ না। তাই ওনাকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’