জয়পুরহাটের কালাইয়ে শেষ রাতে অপরিপক্ব আলুর খেত সেচ দিয়ে নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে উপজেলার বেগুনগ্রামের হারারপাতার মাঠে
জয়পুরহাটের কালাইয়ে শেষ রাতে অপরিপক্ব আলুর খেত সেচ দিয়ে নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে উপজেলার বেগুনগ্রামের হারারপাতার মাঠে

শেষ রাতে সেচ দিয়ে ৮ বিঘা আলুখেত নষ্ট করল দুর্বৃত্তরা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় সেচযন্ত্র চালু করে আট বিঘা আলুখেত ডুবিয়ে নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দিবাগত শেষ রাতে উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের বেগুনগ্রামের হারারপাতা মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

সেচ দিয়ে খেত ডুবিয়ে দেওয়ায় অপরিপক্ব আলু তুলতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। পূর্বশত্রুতা ও সেচসংশ্লিষ্ট একটি চক্র চাঁদা না পেয়ে এমন কাজ করতে পারে বলে গভীর নলকূপের মালিক ও চাষিরা ধারণা করছেন। পুলিশ বলছে, পূর্বশত্রুতার জেরে কেউ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। আবার সেচযন্ত্র চালু থাকতে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। নলকূপ অপারেটর সুইচ বন্ধ করেননি। পরে বিদ্যুৎ এলে সেচ চালু হয়ে যায়, এমনটিও হতে পারে।

ক্ষতিগ্রস্ত আলুখেতের মালিক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিন্দারপুর ইউনিয়নের হারারপাতা মাঠে এবার ব্যক্তিমালিকানাধীন গভীর নলকূপ দিয়ে সেচকাজ করা হচ্ছিল। শেষ রাতে ‘ড্রেনম্যান’ গভীর নলকূপ বন্ধ করে ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি চলে যান। দুর্বৃত্তরা গভীর নলকূপের ঘরের দরজা ভেঙে নলকূপ চালু করে নালার মুখ আলুর খেতের দিকে কেটে দেয়। এতে অপরিপক্ব আলুখেত ডুবে যায়।

আলুচাষিরা জানান, আজ শনিবার সকাল আটটার দিকে চাষিরা মাঠে গিয়ে নলকূপ চালু ও আলুখেত ডুবে যাওয়া দেখে নলকূপের মালিককে খবর দেন। মালিক ও ড্রেনম্যান এসে নলকূপের ঘরের দরজা ভাঙা দেখেন। এরপর তাঁরা নলকূপ বন্ধ করেন। এতে মাঠের সাতজন কৃষকের আট বিঘা আলুখেত ডুবে যায়। পরে গভীর নলকূপের মালিক নিজ খরচে পানি অপসারণ ও খেত থেকে আলু তোলার ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করে চাষিদের সঙ্গে সমঝোতা করেন। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেন। পরে খেতের অপরিপক্ব আলু তোলা শুরু করেন চাষিরা।

সকালে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ডুবে যাওয়া খেত থেকে আলু তুলছেন চাষিরা। কেউ কেউ আলুখেতের পানি সরানোর কাজ করছিলেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শারফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পানিতে আট বিঘা আলুখেত ডুবে নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে তাঁর এক বিঘা খেত নষ্ট হয়েছে। তাঁর আলুখেতের বয়স ৫৭ দিন হয়েছিল। আলু পরিপক্ব হয়নি। খেত ডুবে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অপরিপক্ব আলু তুলছেন। গভীর নলকূপের মালিক নিজের খরচে খেতের পানি অপসারণ ও আলু তোলার ব্যবস্থা করেছেন।

গভীর নলকূপের মালিক আউয়াল হোসেন বলেন, ড্রেনম্যান শেষ রাতে নলকূপের সেচকাজ বন্ধ করে বাড়ি চলে আসেন। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা দরজা ভেঙে গভীর নলকূপের ঘরে ঢুকে আলুখেত ডুবিয়ে দিয়েছে। সেচসংশ্লিষ্ট একটি চক্র বিভিন্নভাবে চাঁদা আদায় করছিল। তাঁর ধারণা, ওই চক্র এ কাজ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে বসে তিনি সমঝোতা করেছেন। জিন্দাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য টোপন চৌধুরীও সেচকাজসংশ্লিষ্ট চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াসিম আল বারী বলেন, খবর পেয়ে তিনি ওই মাঠে গিয়েছিলেন। গভীর নলকূপের পানিতে কয়েক বিঘা আলুখেত ডুবে গেছে। ভোরে ড্রেনম্যান গভীর নলকূপের ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি চলে যান। এরপর নলকূপ চালু করে আলুখেতে সেচ দেওয়া হয়। পূর্বশত্রুতার জেরে কেউ ঘটনাটি ঘটিয়েছে অথবা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর ড্রেনম্যান সুইচ বন্ধ না করে বাড়ি চলে যান। পরে বিদ্যুৎ এসে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনায় গভীর নলকূপের মালিক বা কৃষকদের কেউই থানায় অভিযোগ করেননি।