বাবা অসুস্থ, বর্গা জমিতে চাষ করে সংসার চালান মা। পড়ালেখার খরচ দেওয়ার মতো টাকা নেই বাবার। তবু থেমে থাকেনি জোষ্ঠি চাকমার পড়ালেখা। নৃত্যশিল্পী হিসেবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যে সম্মানী পেত, তা দিয়েই নিজের ও ছোট বোনের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে আসছে জোষ্ঠি। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫।
জোষ্ঠি চাকমার বাড়ি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় দুর্গম উত্তর পাবলাখালী গ্রামে। সে উপজেলার খেদারমারা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়। বিদ্যালয়টিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী জোষ্ঠি। এসএসসি পাস করলেও এখন কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় সে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, রায়ন চাকমা ও সঞ্চিতা চাকমা দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে জোষ্ঠি দ্বিতীয়। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে শ্রাবন্তী চাকমা খেদারমারা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
জোষ্ঠির বাবা রায়ন চাকমা একসময় ঢাকার একটি কারখানার শ্রমিক ছিলেন। এখন অসুস্থ হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। জোষ্ঠির মা বর্গা চাষ করে পরিবারের খাবারের জোগান দেন। চাষাবাদে তাঁকে সহযোগিতা করে জোষ্ঠি। নৃত্যশিল্পী হিসেবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ডাক পড়ে তার। সেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা সম্মানী পায় সে। সেই টাকা দিয়ে জোষ্ঠি নিজের ও তার ছোট বোনের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে জোষ্ঠি চাকমা জানায়, এসএসসির ফলাফলে সে খুশি। পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে চায় সে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার। জোষ্ঠির বাবা রায়ন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি কাজ করতে পারেন না। তাঁদের ৪০ শতক কৃষিজমি থাকলেও তা পরিবারের খরচ মেটাতে বন্ধক দিতে হয়েছে। তাঁর স্ত্রী এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে ৩০ শতক জমি বর্গা নিয়ে বোরোর চাষ করেছেন। চাষাবাদ দিয়ে কোনোরকমে পরিবারের খরচ মেটে। তিনি বলেন, ভালো ফল করলেও মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ মেটানো নিয়ে তিনি শঙ্কিত। মেয়েকে কলেজে ভর্তি করানো এখনো অনিশ্চিত।
খেদারমারা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুষারিপ চাকমা বলেন, বিদ্যালয় থেকে ১৫৭ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জিপিএ-৫ পেয়েছে জোষ্ঠি। সে ছাত্রী হিসেবে খুবই মেধাবী। তার পড়ালেখার খরচ মেটানো গেলে সে ভবিষ্যতেও ভালো ফলাফল করবে।
খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্টু চাকমা বলেন, জোষ্ঠি পড়ালেখার পাশাপাশি ভালো নৃত্যও করে। তবে তাকে পড়ানোর সামর্থ্য পরিবারের নেই। কোনো বৃত্তি বা সহায়তা পেলে তার পড়ালেখার পথ সুগম হতো।