স্থানীয় বাজারের তুলনায় শাকসবজির দাম কম। কেজিপ্রতি ১০–৩০ টাকা কমে কিনতে পারছেন লোকজন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে সবজি কিনতে সেখানে ভিড় করেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি পৌঁছে দেওয়ার এই কার্যক্রম শুরু করেছেন ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের একদল শিক্ষার্থী।
আজ সোমবার সকাল আটটা থেকে কলেজের মুক্তমঞ্চের সামনে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি বিক্রির এই কার্যক্রম শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এটি চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ দোকান চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
আনন্দ মোহন কলেজের প্রধান ফটকের বিপরীত দিকেই বসানো হয়েছে এই দোকান। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ’ ব্যানারে একটি শামিয়ানা টানিয়ে দোকানটি চালানো হচ্ছে। টেবিলে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। গতকাল থেকে প্রচারণা শুরু হওয়ায় আজ সকালেই অনেকে সেখানে শাকসবজি কিনতে আসেন।
নগরের বাউন্ডারি রোড এলাকার বাসিন্দা নিলুফার ইয়াসমীন (৫০) ফেসবুকে পোস্ট দেখে ন্যায্যমূল্যে সবজি কিনতে আসেন। সবজি কিনে ব্যাগ ভরে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বলেন, বাজারের চেয়ে সব সবজির দাম এখানে কম। আন্দোলনের পরে কয়েক দিন সিন্ডিকেট না থাকায় বাজার সহনীয় থাকলেও এখন আবার সবকিছুর দাম বেশি। শিক্ষার্থীরা এ কার্যক্রম চলমান রাখলে বাজারে জিনিসের দাম কমতে পারে।
আজ ১৩ ধরনের সবজি বিক্রি করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যের দোকানে। স্থানীয় বাজার থেকে এই দোকানে কম দামে সবজি বিক্রি করেন তাঁরা। কাঁচা মরিচ এই দোকানে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বাজারে ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কচুর লতি বিক্রি করা হচ্ছিল ৮০ টাকা কেজিতে, যা বাজারে ১০০-১২০ টাকা। ঢ্যাঁড়স ৭০ টাকা বিক্রি করলেও বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। লম্বা বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি করলেও বাজারে ১০০-১২০ টাকা কেজি। ছোট বেগুন ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও বাজারে ১৫০ টাকা কেজি। শসা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বাজারে দাম ৭০-৮০ টাকা। পটোল ৮০ টাকা বিক্রি হলেও বাজারে ১০০ টাকা, আলু ৫৫ টাকা বিক্রি হলেও বাজারে ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৫৫-৬০ টাকা বিক্রি হলেও বাজারে ৭০-১০০ টাকা। ফুলকপি ২৫ টাকায় বিক্রি হলেও বাজারে ৫০ টাকা। লাউশাক ও মুলাশাক ৩৫ টাকা আঁটি বিক্রি হলেও বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
আনন্দ মোহন কলেজের ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রির উদ্যোগটি নিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের একজন আনোয়ার হোসেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ময়মনসিংহের সমন্বয়কও। তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছ থেকে আমরা সংগ্রহ করায় কম দামে বিক্রি করতে পারছি। বাজারে আসা সবজি কৃষক থেকে বাজারে আসতে কয়েকটি হাতবদল হওয়ায় দাম বেড়ে যায়। কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে পরিবহন খরচ যোগ করে বিক্রি করেও বাজারের চেয়ে ২০-৩০ টাকা কমে সবকিছু বিক্রি করা যাচ্ছে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার আসার পর সিন্ডিকেট এই সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য মূল্য বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষার্থীরা মিলে কৃষক ও ভোক্তার সুবিধা করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি। এতে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন, ভোক্তাও কম দামে কিনতে পারবেন। বাজার যত দিন অস্থিতিশীল থাকবে, তত দিন আমাদের কার্যক্রম চলবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ ঘুরে দেখে আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ বলেন, বর্তমানে বাজারে উচ্চমূল্যে শাকসবজি বিক্রি করে সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এখান থেকে ফায়দা লুটছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যে সবজির বিক্রির উদ্যোগটির ফলে এটি নিরসন হবে অনেকটা। এ ধরনের উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবে।