দুধের ছানায় তৈরি হয় নানা রকমের সন্দেশ। এমন এক সন্দেশের নাম ‘দাদুর সন্দেশ’। স্বাদে অতুলনীয় এই সন্দেশ মিলবে নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার ছোট যমুনা নদীর বেইলি সেতুর পাশে চাকচিক্যহীন ছোট্ট এক দোকানে।
‘দাদুর সন্দেশ’ নামের এই মিষ্টির কারিগর আজিমুদ্দিন। বয়স এখন ৮৫ বছর। বাড়ি বদলগাছি উপজেলার কদমগাছি গ্রামে। চার সন্তানের বাবা আজিমুদ্দিন বয়সের ভারে ঠিকমতো চলতে পারেন না, নিজের হাতে সন্দেশও বানাতে পারেন না। বড় ছেলে এবারত হোসেন (৬৫) এখন সন্দেশ বানান, পাশে বসে নির্দেশনা দেন আজিমুদ্দিন।
সম্প্রতি নদীর কাছের দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ওপরে টিনের ছাউনি আর চারপাশ খোলা। সেখানকার চৌকিতে দুটি পাত্রভর্তি করে রাখা সন্দেশ। লোকজন আসছেন। গল্প করতে করতে সন্দেশ খাচ্ছেন। সন্দেশ বিক্রির কাজটি করছিলেন আজিমুদ্দিনের বড় ছেলে এবারত হোসেন।
এ সন্দেশের বিষয়ে জানতে চাইলে এবারত হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে এক ব্যক্তি মিষ্টি বানাতেন। আমার বাবা আজিমুদ্দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি বানানো দেখতেন। এভাবে মিষ্টি বানানো দেখতে দেখতে আমার বাবা দুধের ছানার সন্দেশ বানিয়ে বিক্রি শুরু করেন। সেই সন্দেশের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমার বাবা সন্দেশ বানিয়ে বদলগাছির বেইলি সেতুর পাশে বসে বিক্রি শুরু করেন। এটা প্রায় ৪০ বছর আগের কথা। তখন সন্দেশের কেজি ছিল ৩৬ টাকা।’
এবারত বলতে থাকেন, এই সন্দেশের আগে নাম ছিল না। তাঁর বাবার বয়স বিবেচনায় নিয়ে লোকে এটাকে ‘দাদুর সন্দেশ’ বলতে থাকেন। এভাবে মুখে মুখে সন্দেশের নাম হয়ে যায় ‘দাদুর সন্দেশ’।
কীভাবে সন্দেশ বানান, জানতে চাইলে এবারত হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে সন্দেশ তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথমে দুধ থেকে ছানা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে এলাচি, চিনি অথবা গুড় দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে সন্দেশ বানান। সেই সন্দেশ বেইলি সেতুর মোড়ে নিয়ে বিক্রি করেন। এখন প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি সন্দেশ তৈরি করেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার সন্দেশ বিক্রি হয়। এতে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা টাকা লাভ হয়। এখন প্রতি কেজি সন্দেশের দাম ৫২০ টাকা। সন্দেশ বিক্রির টাকায় তাঁদের তিন বিঘা জমি, ইটের পাকা বাড়ি হয়েছে। বাবার সন্দেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে চান তিনি।
হলুদ বিহার গ্রামের ইমদাদুল হক বলেন, বদলগাছির দাদুর সন্দেশ খুবই সুস্বাদু। প্রতিদিনই এই এলাকার ও আশপাশের এলাকার মানুষ এই সন্দেশ খেতে আসেন।
সাইফুল ইসলাম নামের একজন দোকান থেকে এক কেজি সন্দেশ কিনলেন। বলেন, ‘আমার বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায়। বদলগাছির দাদুর সন্দেশের নাম শুনেছি। আম কিনতে সাপাহারে এসেছিলাম। সেখান থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় এই সন্দেশ কিনে নিলাম।’
বদলগাছি বেইলি সেতু এলাকার ধান ব্যবসায়ী চঞ্চল মণ্ডল বলেন, ‘এখন অনেকেই সন্দেশ তৈরি করেন। তবে দাদুর সন্দেশের মতো স্বাদ কেউ আনতে পারেননি। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে লোকজন দাদুর সন্দেশ কিনতে আসেন। বিয়েশাদি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সন্দেশ অর্ডার করেন। এলাকার অনেক লোক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরে থাকেন। তাঁরা দেশে বেড়াতে এলে দাদুর সন্দেশ সঙ্গে ফেরেন।’