স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ

জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি

নিরাপদ ক্যাম্পাস, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং অছাত্রদের হল থেকে বের করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আবাসিক হলগুলো থেকে অছাত্রদের বের করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে গণপোস্টারিং, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বর এলাকায় গণপোস্টারিং কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ‘ধর্ষকের কালো হাত ভেঙে দাও’, ‘এই ক্যাম্পাসে ধর্ষকের কোনো জায়গা নেই’, ‘ছদ্ম গণরুম বিলুপ্ত করো’, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলছে জাবি’ ইত্যাদি স্লোগান–সংবলিত পোস্টার নতুন কলা ভবন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, পুরোনো কলা ভবনের দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হয়।

বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে একটি মতবিনিময় সভা করেন। সভায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ গঠন করা হয়।

মতবিনিময় সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী অভিযোগ কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন এমন কেউ নেই। আমরা এই তদন্ত কমিটিতে আমাদের প্রতিনিধি এবং যৌন নিপীড়নবিরোধী অভিযোগ কমিটিতে রয়েছেন, এমন কাউকে যুক্ত করার দাবি জানাব।’

বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীদের অপর একটি অংশ নতুন কলা ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে তাঁরা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও আবাসিক হলগুলো থেকে অছাত্রদের বের করার দাবিতে গণপোস্টারিং কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা

সমাবেশে তাসফিয়া সানজানা বলেন, ‘আমরা সবাই জানি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটা স্টুডেন্টের জন্য একটা নিরাপদ জায়গা। এই জায়গায় এমন অপরাধ আমরা মানি না, মানব না এবং আমরা এই ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই, আমরা শান্তির বিশ্ববিদ্যালয় আবার ফিরে পেতে চাই।’
নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থী সিফাত জেরিন বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারে; পাশাপাশি যারা ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসবে তারাও যেন নিরাপদে ক্যাম্পাসে ঘুরে চলে যেতে পারে। আমাদের বাবা-মার যেন দূরে থেকে চিন্তা করতে না হয় যে তাঁদের ছেলেমেয়ে ক্যাম্পাসে নিরাপদে আছে কি না।’

প্রশাসনের থানায় অভিযোগ

সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান ধর্ষণে অভিযুক্ত ও তাঁদের পালাতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, শনিবার রাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান এবং বহিরাগত যুবক মামুন মিলে জোরপূর্বক এক নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনের অংশে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ ছাড়া মোস্তাফিজুর এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহ পরান, ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ এস এম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন (সাগর) ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তা করেন। অভিযুক্তদের পালাতে সহযোগিতাকারীদের হল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানান আবু হাসান।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার পদে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রয়েছেন।’