রাজশাহীতে বাসশ্রমিক ও সিএনজিচালকেরা এবার মীমাংসায় বসে মারামারি করলেন

রাজশাহী তানোরের গত সোমবার বাস শ্রমিকদের ওপর হামলার জের ধরে একই দিন দুপুরে রাজশাহী রেলস্টেশন এলাকায় বাস শ্রমিকেরা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় হামলা চালায়
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে বাসশ্রমিক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের বিবাদ নিরসনের জন্য প্রশাসনিক চেষ্টা সফল হয়নি। এবার রাজনৈতিকভাবে মীমাংসায় বসে তাঁরা আবার মারামারি করেছেন। এতে দুই পক্ষই তাঁদের দুজন করে আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের ষষ্ঠীতলায় মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে এই মারামারির ঘটনা ঘটে। দুপক্ষের এই দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য পুলিশ বিএনপি নেতা মামুনকেই দায়িত্ব দিয়েছিল। তবে মারামারির কারণে মীমাংসা হয়নি।

জানতে চাইলে মামুন অর রশিদ বলেন, ‘পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের ডিসি আমাকে দুই পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করে দিতে বলেছিলেন। সে অনুযায়ী আমি বসি। মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন আসে, সিএনজিচালকদের একটা গ্রুপ (পক্ষ) আসে, কিন্তু অন্যটি আসেনি। তাই মীমাংসা হবে না বলে দিই। এ সময় হঠাৎ হারু গ্রুপ (সিএনজিমালিকদের একটি গ্রুপ) চলে আসে এবং আমার সামনেই মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই-তিনজনকে মারধর করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যেই মারামারি লেগে যায়।’

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিক আলী বলেন, ‘ওরাই সব সময় মারামারি করে, আর দোষ হয় আমাদের। আজ ওরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এতে দুজন আহত হয়েছেন। এখন রাতে আবার পুলিশ-প্রশাসন উভয় পক্ষকে নিয়ে বসার কথা।’

রাজশাহী সিএনজি মালিক সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মীমাংসায় বসে মোটরশ্রমিকেরা আমাদের কথা বলতে দিচ্ছিলেন না। আমাদেরই তাঁরা মারধর করেছেন। এতে দুজন আহত হয়েছেন। এক সিএনজিচালককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আর কোনো রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে মীমাংসায় বসতে রাজি নই। পুলিশ-প্রশাসন থাকবে, আমরা দুই পক্ষ থাকব। এভাবে মীমাংসা করতে হবে। সন্ধ্যার পর ট্রাফিকের ডিসির অফিসে আবার বসার কথা আছে।’

রাজশাহীতে প্রায়ই সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও বাসের শ্রমিকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। গত সোমবার সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা তানোর উপজেলা সদরে বাসের ছয়জন চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরকে মারধর করেন। পরদিন বাসশ্রমিকেরা নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে লাঠিসোঁটা ও হাতুড়ি নিয়ে এসে রেলগেট সিএনজি স্ট্যান্ডে হামলা করেন। তাঁরা ৭০ থেকে ৮০টি সিএনজি অটোরিকশার কাচ ভাঙচুর করে চলে যান। যাত্রী ও সিএনজিচালক মিলিয়ে ৪০ জনকে মারধরের অভিযোগ তুলেছে সিএনজি মালিক সমিতি। এর জের ধরে গতকাল বুধবার রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকায় বিক্ষোভ করেন সিএনজিচালকেরা। দুটি বাসও ভাঙচুর করা হয়।

ফলে রাজশাহী-নওগাঁ এবং রাজশাহী-আমনুরা রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আজ থেকে বাস চলছে। সোমবার তানোরের ঘটনার পর ১৮ জন সিএনজিচালকের নামে মামলা হয়েছে। তবে সিএনজি স্ট্যান্ডে হামলার ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

গতকাল দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) নূর আলম সিদ্দিকী উভয় পক্ষকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বসেছিলেন। এ সময় মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। পরে বিএনপি নেতা মামুন অর রশিদকে দায়িত্ব দেন। তখন সিএনজিচালকেরাও বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন। তবে মামুনের কার্যালয়ে বসার পর আজ আবার দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ফলে মীমাংসা ভেস্তে যায়।

এ বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগের ডিসি নূর আলম সিদ্দিকীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মোটরশ্রমিকদের নিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের কোনো কমিটি নেই। তাঁদের চার-পাঁচজন এসেছিলেন, কিন্তু তাঁদের কথাই যে তাঁদের পক্ষের সবাই মানবেন, এ রকম পরিবেশ নেই। তিনি নিজেই ওদের স্ট্যান্ডে গিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো নেতা না থাকার কারণে একেকজন একেক রকম কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে মীমাংসার জন্য মামুন সাহেব দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এটা হলে ভালো হতো, কিন্তু সেখানেও মারামারি হয়েছে। তারপরও তাঁরা চেষ্টা করবেন বলে নূর আলম সিদ্দিকী জানান।