ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বরিশালের হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত রাসিব আকনের মা শিউলী বেগম। ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি
ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বরিশালের হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত রাসিব আকনের মা শিউলী বেগম। ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি

বরিশালে ব্যাগে দা পাওয়ায় পিটুনি, শ্রমিক নিহত

বরিশাল নগরে পিটুনিতে একজন টিউবওয়েল শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ভোরে নগরের চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকের নাম রাসিব আকন (২০)। তিনি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ছোপখালী গ্রামের বাসিন্দা ইউনুস আকনের ছেলে। হবিগঞ্জ থেকে বরগুনায় ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বেলা ১১টায় কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় রাসিব আকনকে থানায় নিয়ে আসেন। তাঁর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আমরা ওই তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দিই। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদের জানিয়েছেন।’

শিক্ষার্থীরা জানান, আজ ভোরে একটি ইজিবাইকে করে রাসিব আকন রূপাতলী যাচ্ছিলেন। এ সময় নগরের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় চেকপোস্টে শিক্ষার্থীরা ইজিবাইকটি থামান এবং যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করেন। রাসিব আকনের ব্যাগ তল্লাশির সময় ব্যাগের মধ্যে একটি দা পাওয়া যায়। পরে তাঁকে ইজিবাইক থেকে নামানো হয়। সেখানে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা জড়ো হন এবং রাসিব আকনকে ডাকাত হিসেবে সন্দেহ করে মারধর শুরু করেন। পিটুনিতে তিনি গুরুতর আহত হলে তাঁকে প্রথমে শিক্ষার্থীরা কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা আহত ওই তরুণকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রাসিবকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাসিবের বড় ভাই রাজিব আকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে আমার ভাই জমি নিয়ে বিরোধের মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার তারিখ ধার্য ছিল। এ জন্য আমি দুই হাজার টাকা পাঠালে সে সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে বরগুনায় আসছিল। পথে বরিশাল নগরের চৌমাথা এলাকায় শিক্ষার্থীদের চেকপোস্টে পড়লে সেখানে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররাই ফোন দিয়েছে। তাঁদের হাতেই আমার ভাই নিহত হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ঘটনায় আমার বাবা ইউনুস আকন থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’

নিহত রাসিবের মা শিউলী বেগম ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে দুপুর ১২টার দিকে বরিশালে ছুটে আসেন। তিনি হাসপাতালে ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে সিলেটে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাইতো। আমার নিরপরাধ ছেলেটারে ক্যা মাইর‍্যা ফালাইলো, আমি অ্যার বিচার চাই।’      

কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার নাফিজুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার ভোরে নগরের হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় শিক্ষার্থীদের চেকপোস্টে তল্লাশিকালে রাসিবের কাছে একটি ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায়। তখন তাঁকে মারধর করেন উপস্থিত ছাত্র-জনতা। এরপর বেলা ১১টার দিকে রাসিবকে অচেতন অবস্থায় থানায় নিয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। তখন রাসিবকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসিবকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভোরে চেকপোস্টে রাসিবকে মারধর করা হলে বেলা ১১টায় কেন থানায় নেওয়া হলো জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ নাফিস বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিস্তারিত পরে বলা যাবে।’

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের সমন্বয়ক কে এম হৃদয় রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করছিলেন। আজ ভোরে ইজিবাইকে নথুল্লাবাদ থেকে রূপাতলী যাওয়ার পথে চৌমাথা এলাকায় ওই শ্রমিকের ব্যাগ তল্লাশি করে একটি দা পাওয়া যায়। এরপর তাঁকে জেরা করা হলে সেখানে অনেক লোক জড়ো হয় এবং গণপিটুনি দেয়। এরপর তিনি মারা যান। বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ছিল না।’ ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সম্পর্কে সার্বিক খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই বরিশালে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বাসদের জেলা সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সারা দেশে ডাকাত আতঙ্ক চলছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো মাঠে পুরোপুরি সক্রিয় নয়। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এটি কোনোভাবেই উদ্দেশ্যমূলক হত্যা নয়।