মামলা
মামলা

১০ বছর আগের হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক এসপিসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

১০ বছর আগে দেবহাটা উপজেলার চিনেরডাঙা গ্রামের সিরাজুল সরদারকে হত্যার ঘটনায় সাতক্ষীরার তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরসহ ৪৪ জনের নামে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নিহত ব্যক্তির বোন আনজুয়ারা খাতুন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২৫ জনকে।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক চাঁদ মো. আবদুল আলীম আল রাজী আজ বুধবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নিচে নন, এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে আগামী ২৯ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন দেবহাটা থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী জালাল আহম্মেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান ওরফে মনি, উপজেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে সবুজ, সখীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন, ভোমরা বন্দর ব্যবসায়ী ও চিনেরডাঙা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুল হক প্রমুখ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার চিনেরডাঙা গ্রামের বাবর আলীর ছেলে জামায়াতের কর্মী সিরাজুল সরদার সবজির ব্যবসা করতেন। তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আসামি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ও দেবহাটা থানার ওসি কাজী জালাল আহম্মেদের নির্দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা পুলিশ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে এসে সিরাজুল সরদারের বাড়ি ঘেরাও করেন। আসামি শরিফুল ইসলাম ও একরামুল কবির ঘরে ঢুকে সিরাজুল সরদারকে জোর করে বাইরে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ মারপিট করতে থাকলে মামলার বাদী আনজুয়ারা খাতুন ভাই সিরাজুলকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। পুলিশ সিরাজুলকে তাদের পিকআপে তুলে নিয়ে চলে যায়। সাবেক ছাত্রলীগের নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে সবুজের শরণাপন্ন হলে আসামি আলী মোর্তজা মো. আনোয়ারুল হক নিহত ব্যক্তির স্বজনদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।

২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সখীপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের কেওড়াতলা নামক স্থানে কালভার্টের দিকে কয়েকজন গুলির শব্দ শুনতে পান। সাক্ষী সিরাজ সরদারের মুঠোফোনে, ঘেরের বাসায় অবস্থান করা সাঈদ হোসেন সরদার ও মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে মামলার বাদী ও স্বজনেরা জানতে পারেন যে আসামি পুলিশ কর্মকর্তা কাজী জালাল আহম্মেদের নির্দেশে সিরাজুল সরদারের বুকে গুলি করে পুলিশ। পরে রক্তাক্ত সিরাজুলকে পুলিশ পিকআপে করে নিয়ে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চলে যায়। সেখানে সিরাজুলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ২৯ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সিরাজুলের লাশ তাঁর স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিকেলে সিরাজুলের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ নিহত সিরাজুল সরদারসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামি করে ২৯ এপ্রিল রাতেই থানায় অস্ত্র আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ একটি হত্যা মামলা করে।