সাম্প্রতিক বন্যায় নষ্ট হয় কক্সবাজারের রামুর চাকমারকুল এলাকার ধান। গত বুধবার তোলা
সাম্প্রতিক বন্যায় নষ্ট হয় কক্সবাজারের রামুর চাকমারকুল এলাকার ধান। গত বুধবার তোলা

বন্যায় কক্সবাজারে ফসলের ক্ষতি ৬৭ কোটি টাকার

কক্সবাজারের রামু উপজেলার চকমারকুল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ আহমদের পাড়া। ৩০০ পরিবারের ৭৫ শতাংশই কৃষক। গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বর্গা নিয়ে এবার এক একর জমিতে আউশের আবাদ করেন। কিছু পাকা ধান কেটে ঘরে তোলেন। অবশিষ্ট ধান সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কথা হয় মকবুল হোসেনের সঙ্গে। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি দিশেহারা।

মকবুল (৫৫) বলেন, গত ১৬ আগস্টের পরের কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বাঁকখালী নদীর পানি বেড়ে রামুর নয়টি ইউনিয়নের অন্তত ১৫ হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। বন্যার পানিতে ডুবে যায় পাঁচ হাজার একরের বেশি ধান ও ফসলের জমি।

একই অবস্থা পাশের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক ছাবের আহমদের। ঋণের টাকায় তিনিও এবার এক একর জমিতে আউশের চাষ করেন। ছাবের আহমদ (৪৬) বলেন, ধান ঘরে তোলার আগমুহূর্তে বন্যার পানি সব শেষ করে দিল। ফসল ঘরে তুলতে পারেননি তিনি।

এই বন্যায় শুধু রামুর কৃষকেরা নন, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর, উখিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার অন্তত ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মাঠের ধান ও ফসল হারিয়ে তাঁরা পথে বসেছেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খুরুলিয়া এলাকার কৃষক রশিদ আহমদ বলেন, দুই একর জমিতে ধান ছাড়াও তিনি এক একরের মতো জমিতে শাকসবজির চাষ করেছিলেন। খরচ হয় ১০ লাখ টাকার মতো। বন্যার পানিতে সব শেষ হলেও তিনি কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না।

রামু ও উখিয়ার কয়েজন কৃষক বলেন, এবারের বন্যায় বসতবাড়ি, গ্রামীণ সড়কের পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে দুই উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের ধান পচে গেছে। কেউ কেউ পানির নিচে ডুবে থাকা অবস্থায় ধান কেটে নিলেও কাজে আসছে না। কারও পাকা ধান মাটিতে মিশে গেছে। ফসলের এমন ক্ষতি চাষিরা গত ১০ বছরে দেখেননি। বন্যার পানিতে ডুবে আমনের বীজতলাও নষ্ট হয়েছে অনেক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ১ হাজার ৩৯৭ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। তাতে ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আমনের ১৬৮ হেক্টর বীজতলা নষ্টের বিপরীতে ক্ষতি দেখানো হয় ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৭ হেক্টর জমির। ক্ষতির পরিমাণ ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ৩৪৭ হেক্টর জমির সবজিখেতে ক্ষতির পরিমাণ ২৭ কোটি ৭৭ লাখ; ৩১ দশমিক ৫ হেক্টর জমির পানের ক্ষতি ৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সব মিলিয়ে বন্যায় ২ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে ধানসহ ফসলের ক্ষতি ৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৯৬ জন।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা। এই উপজেলাতে ৫১১ হেক্টর জমির ফসলের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পেকুয়াতে ৫৬২ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। চকরিয়া ৪১৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, আমন আবাদের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার কৃষকের জন্য প্রণোদনা হিসাবে প্রত্যেক কৃষকের হাতে ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সার এবং নগদ ১ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, গত ১০-১২ দিনে বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ জরিপ করে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ হাজার ৭৯৬ জন কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। তাতে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের প্রাথমিক ক্ষতি নির্ধারণ করা হয় ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।