বরিশালের মুলাদীর জয়ন্তী নদীতে জেলের জালে আটকা পড়া কুমির
বরিশালের মুলাদীর জয়ন্তী নদীতে জেলের জালে আটকা পড়া কুমির

বরিশালে মাছ ধরার জালে উঠে এল কুমির

বরিশালের মুলাদী উপজেলায় এক জেলের জালে একটি কুমির ধরা পড়েছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ঘোষেহাট ভূঁইয়াবাড়ি–সংলগ্ন জয়ন্তী নদীতে জেলে জাবুল হোসেন তালুকদারের জালে কুমিরটি আটকা পড়ে।

বন বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কুমিরটি জীবিত আছে এবং এটি উদ্ধার করে অবমুক্ত করার জন্য বন্য প্রাণী অপরাধ দমন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাঁরা এটি উদ্ধারের জন্য এখানে আসবেন। বর্তমানে এটি তাঁদের হেফাজতে আছে।

ঘোষেরহাট এলাকার জেলে জাবুল হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিনি আজ সকালেও আইড় ও পাঙাশ মাছ ধরার জন্য জয়ন্তী নদীতে জাল ফেলেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে জাল তোলার সময় জালটি অনেক ভারী লাগছিল। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন হয়তো বড় কোনো মাছ আটকা পড়েছে। এরপর জাল কাছে আসার পর দেখতে পান, জালে একটি কুমির আটকা পড়েছে। কুমিরটি দেখে প্রথমে কিছুটা ভয় পান। এরপর কৌশলে জাল টেনে নদীর পাড়ে এনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. রুবেল মিয়াকে খবর দেন। এরপর উৎসুক লোকজন সেখানে জড়ো হলে ভিড় বাড়তে থাকে।

ইউপি সদস্য রুবেল মিয়া বলেন, জেলেদের কাছ থেকে কুমিরের বিষয়ে জানতে পেরে বিষয়টি মুলাদী থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান তিনি। পরে পুলিশ এসে বিষয়টি নিশ্চিত হয়। কুমির যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘কুমিরের বিষয়টি আমি জানার পরে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা ঢাকা থেকে এসে কুমিরটিকে সংরক্ষণ করে অবমুক্ত করার ব্যবস্থা নেবে।’

বরিশালের মুলাদীর জয়ন্তী নদীতে জেলের জালে আটকা পড়া কুমির দেখতে ভিড়

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের কুমিরটি নোনাপানির। জয়ন্তী নদীর মিঠা পানিতে এটির চলে আসাটা অস্বাভাবিক। এ প্রজাতির কুমিরের বসতি সুন্দরবন–সংলগ্ন নদ-নদীতে। কুমিরটি এই নদীতে চলে আসার ঘটনা নিয়ে তাঁরাও উদ্বিগ্ন।

জানতে চাইলে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন অধিদপ্তরের ঢাকা কার্যালয়ের পরিদর্শক অসীম কুমার মল্লিক গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিরটি নোনাপানির। তবে এটা এই নদীতে চলে আসাটা অস্বাভাবিক। আমাদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলের নদ-নদীতে লবণাক্ততা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে এই লবণাক্ততা উজানে বহুদূর বিস্তৃত হয়েছে। সে কারণেই হয়তো খাবারের সন্ধানে দলছুট কুমিরটি এই নদীতে চলে এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কুমিরটি উদ্ধারের জন্য আমার নেতৃত্বে একটি দল মুলাদী যাবে। আগামীকাল মঙ্গলবার নাগাদ এটি উদ্ধার করে আমরা সুন্দরবনের করমজলে নেব। এরপর সেখানে কুমির প্রজননকেন্দ্রে এটি অবমুক্ত করা হবে।’