আজ শনিবার সূর্য ওঠার আগে পলোর ঝুপঝাপ শব্দে মুখর হয়ে ওঠে নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের শহরবাড়ি ও কয়রাবাড়ি গ্রাম। সেখানে মাছ ধরতে এসেছিলেন গাইবান্ধা থেকে আসা প্রায় দেড় হাজার মানুষ। তাঁদের হাতে ছিল চাক পলো, নেটপলো, ঠেলাজাল, বাদাইজাল, লাঠিজালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম। দল বেঁধে মাছ ধরার এ দৃশ্য দেখতে বিলপাড়ে জড়ো হয় হাজারো মানুষ।
তবে ১১টি বাস, সাতটি বড় ট্রাক ও চারটি ছোট ট্রাকে চেপে দেড় শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাছ ধরতে আসাটা মোটেও সুখকর হয়নি শৌখিন মাছশিকারিদের। কারণ, দুপুর পর্যন্ত বিলের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ ঘেরাও করে তাঁরা পেয়েছেন মাত্র তিনটি বোয়াল মাছ। যেন চলনবিলে মাছের আকাল চলছে। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, বিলে পানি থাকায় শৌখিন মাছশিকারিরা মাছ ধরতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ ভোরে তাঁদের ঘুম ভাঙে পলো ফেলার ঝুপঝাপ শব্দে। ঘুম থেকে উঠেই তাঁরা দেখতে পান হাজারো মানুষ চলনবিলে মাছ ধরতে নেমেছেন। তাঁরা দল বেঁধে চাক পলো, নেটপলো, ঠেলাজাল, বাদাইজাল, লাঠিজালসহ মাছ ধরার বিচিত্র সরঞ্জাম দিয়ে মাছ ধরছেন। কেউ মাজাপানিতে, কেউ বুকসমান পানিতে আবার কেউ গভীর পানিতে ডুব দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। তাঁদের পরস্পরের কথাবার্তা ও ঝুপঝাপ শব্দে বিলজুড়ে কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দুপুর পর্যন্ত মাছ ধরার অবিরাম চেষ্টা চালান। কিন্তু হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা। কারণ, সবাই মিলে মাত্র তিনটি বোয়াল মাছ ধরতে পেরেছেন। মাছ তিনটির ওজন সব মিলিয়ে ৯ কেজি হবে।
মাছ ধরতে আসা শাহাদৎ হোসেন বলেন, তিনি গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থেকে মাছ ধরতে এসেছেন। ১১টি বাস ও ১১টি ছোট-বড় ট্রাকে তাঁর সঙ্গে অন্তত দেড় হাজার মাছশিকারি এসেছেন। তাঁদের মাথাপিছু খরচ পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু উল্লেখ করার মতো কোনো মাছ পাননি। তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে তিনি দেশের বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয়ে পলো দিয়ে মাছ ধরেন। এবারের অভিজ্ঞতা হতাশাজনক।
বাসুদেবপুর এলাকার সাহেব মিয়া বলেন, ‘দল বেঁধে মাছ মারতে যাওয়া আমাদের শখ। মাছ না পেলেও দুঃখ নেই। একসঙ্গে পানিতে লাফ-ঝাঁপ করে বেশ মজা পাই। ভেবেছিলাম, চলনবিলে অনেক মাছ পাব। কিন্তু পাইনি। তাতে বুঝলাম, এখন আর আগের মতো এখানে মাছ পাওয়া যায় না।’
গাইবান্ধার পাবনাপুর গ্রামের আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ ও বোনারপাড়া এলাকার লোক এসেছি। আগে আমরা হাওরে পলো নিয়ে মাছ মারতে গিয়েছি। এবার চলনবিলে মাছ ধরতে এসেছি শখ করে। মাছ না পেয়ে খারাপ লাগেনি। তবে হতাশ হয়েছি।’
চলনবিল পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি এস এম রাজ আহমেদ বলেন, ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে বাস-ট্রাকে দল বেঁধে এভাবে মাছ ধরতে আসা আগে কখনো দেখেননি। একসঙ্গে এত লোকের মাছ ধরতে আসা দেখে ভালো লেগেছে।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, চায়না জাল ও সোতি জাল দিয়ে চলনবিলে নির্বিচার মাছ ধরার কারণে বিলে মাছের উৎপাদন কমে গেছে। এত লোক মিলে তিনটি মাছ ধরার মধ্য দিয়ে বিলের মাছ কমে যাওয়ার বিষয়টি আবার প্রমাণিত হলো।
তবে সিংড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, বিলে পানি বেশি থাকায় গাইবান্ধা থেকে আসা শৌখিন মাছশিকারিরা মাছ ধরতে পারেননি।