মুচলেকা দিয়ে অভিযুক্ত ভাতিজাকে নিয়ে গিয়েছিলেন আ.লীগ নেতা চাচা

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে গত সোমবার রাতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা
ফাইল ছবি

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনায় ও হাসপাতালের শিক্ষানবিশ এক চিকিৎসককে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলাতেই আবদুল্লাহ নামের এক তরুণকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ দুটি মামলা করা হয়।

দুই মামলার এজাহারে অভিযুক্ত ওই তরুণের পুরো নাম কিংবা ঠিকানা উল্লেখ করা না হলেও একটি মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল খালিকের ‘ভাতিজা’। আবদুল খালিক সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। অন্য মামলার এজাহারে আবদুল্লাহর বাবার নাম ও ঠিকানা অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত শনিবার হাসপাতালের কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান আবদুল্লাহ। ওই সময় হাসপাতালের কর্মচারি ও শিক্ষার্থীরা আবদুল্লাহকে পুলিশে সোপর্দ করলে আবদুল খালিক মুচলেকা দিয়ে আবদুল্লাহকে নিয়ে যান।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসনের করা দুটি মামলায় আবদুল্লাহসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি ছয় আসামি হলেন দিব্য, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন ও সামি।

আবদুল খালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজা আবদুল্লাহ পবিত্র কোরআনে হাফেজ। শনিবার রাতে তাঁর বন্ধুর এক স্বজন হাসপাতালে আসন (শয্যা) না পাওয়ার খবর পেয়ে সে হাসপাতালে গিয়েছিল। হাসপাতালে যাওয়ার পর শোনে, আসন দেওয়ার কথা বলে কে বা কারা টাকা নিয়েছে। টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে কয়েকজন স্টাফ ক্ষিপ্ত হয়। এ সময় এক ইন্টার্ন চিকিৎসকও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আবদুল্লাহকে তারা মারধর করে পুলিশের হাতে দেয়।’ পরে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ভাতিজাকে উদ্ধার করেন বলে জানান।

আবদুল খালিক আরও বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে ভাতিজাকে আমার জিম্মায় নিয়ে আসি। সে সময় এলাকার অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। তবে আমি তাদের সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। আমি মুক্তিযোদ্ধা মানুষ। তবু ভাতিজাকে নিয়ে আসার জন্য আমাকে মুচলেকা দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমি মেনে নিয়েছিলাম। পরে গত সোমবার রাতে আবদুল্লাহ বাইরে গেলে আগের ঘটনার জেরে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা তাকে দেখে গালিগালাজ করে। এ সময় সে-ও (আবদুল্লাহ) গালাগাল দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়।’

সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ বলেন, ‘সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালিকের ভাতিজা আবদুল্লাহ ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে শুনেছি। তবে আবদুল্লাহ আমার সঙ্গে সরাসরি রাজনীতি করেন না। তিনি ছাত্রলীগের কোনো পদে নেই।’

এদিকে দুটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার ও মেডিকেল কলেজে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়ে বিক্ষোভ করছেন।