বান্দরবানে আজ শুক্রবার থেকে পাহাড়িদের বর্ষবিদায় আর বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব বৈসাবি শুরু হয়েছে। আজ চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের ফুল ভাসিয়ে গঙিমাকে (মা গঙ্গাদেবী) শ্রদ্ধা নিবেদন ও পবিত্র চিত্তে আগামী বছরের জন্য মঙ্গল কামনা করার ফুলবিজুর দিন।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসবকে ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিষু বলা হয়ে থাকে। তবে মারমা, ম্রো, খেয়াং, খুমি ও চাকদের ‘সাংগ্রাইং’ নামের একই উৎসব আগামীকাল শনিবার মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হবে।
জেলা শহরের শঙ্খ নদে (সাঙ্গু নদ) ভোরে তরুণ-তরুণীদের বিজুফুল (একধরনের বুনো ফুল) ভাসানোর মধ্যে দিয়ে ফুলবিজু শুরু হয়েছে। চাকমা তরুণেরা ধুতি পরে, মাথায় সাদা পাগড়ি বেঁধে, তরুণীরা পিনন, খাদি, গলায় মুদ্রার মালাসহ বর্ণাঢ্য ঐতিহ্যের পোশাকে ফুল ভাসাতে আসেন। এরপর ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোশাকে আসেন তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা। ভোরের শীতল হাওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে শঙ্খ নদের তীর হয়ে উঠে উৎসবমুখর। কলাপাতায় সাজানো ফুলের নৈবেদ্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে নতুন বছরের জন্য সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে গঙিমায়ের উদ্দেশে ফুল ভাসিয়েছেন সবাই।
সকালে ঘরবাড়ি সাজিয়ে তোলা হয়েছে বুনো ফুল ও বনলতায়। গৃহস্থালির সবকিছু পুরোনো বছরের সব কালিমা, মন্দ ধুয়েমুছে পূতপবিত্র করা হয়েছে। আগামীকাল মূল বিজু। ঘরে ঘরে কমপক্ষে পাঁচ ধরনের সবজি দিয়ে রান্না করা খাবার ‘পাঁচন’ ও ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পায়েস রান্না হবে।
বান্দরবান উৎসব উদ্যাপন পরিষদের নেতারা গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামীকাল জেলার সর্বজনীন বৈসাবি বা সাংগ্রাইং-এর মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হবে। শোভাযাত্রায় ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙালিদের থেকেও অংশগ্রহণ থাকবে। এরপর বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। চার দিনব্যাপী সাংগ্রাইং উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাইং ও চাকমা বিজুকে সম্মিলিতভাবে বৈসাবি উৎসব বলা হয়। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরের শেষ দুই দিন (২৯ ও ৩০ চৈত্র) ও নতুন বছরের প্রথম দিন (পয়লা বৈশাখ) এই তিন দিন বৈসু, বিজু ও বিষু উদ্যাপন করে। বর্মী বর্ষপঞ্জি অনুসরণে মারমাসহ পাঁচটি জাতিগোষ্ঠী বছরের শেষ দিনে (৩০ চৈত্র) অথবা বাংলা বছরের প্রথম দিনে সাংগ্রাইং উৎসব উদ্যাপন করে থাকে। খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী বম, পাংখুয়া ও লুসাই এই তিন জনগোষ্ঠী বৈসাবি উৎসব উদ্যাপন করে না।