ফতুল্লার পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগরীতে রপ্তানিমুখী নিট গার্মেন্টসসহ সাড়ে ছয় শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আড়াই লাখ শ্রমিক।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগরীতে প্রবেশের প্রধান একটি সড়কের নির্মাণকাজ তিন মাস ধরে বন্ধ আছে। সড়কের প্রবেশপথে বাঁশ ও সিমেন্টের ব্লক দিয়ে সড়কটি বন্ধ করে রাখা। আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য সড়কে ইটের খোয়া বিছানো হলেও ঢালাই দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে সড়ক দিয়ে হাজারো শ্রমিক চলাচল করছেন।
শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ। ইটের খোয়ার ওপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তাঁদের নিয়মিত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সড়ক বন্ধ থাকায় দূর থেকে মালামাল ওঠানামা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, সময়মতো বিল না পাওয়ায় কাজ বন্ধ আছে। বিল পেলে দ্রুত কাজ শেষ করা হবে। বিসিক কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, নিয়মানুযায়ী কাজ শেষ করে বিল নিতে হবে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ফতুল্লার পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগরীতে রপ্তানিমুখী নিট গার্মেন্টসসহ সাড়ে ছয় শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আড়াই লাখ শ্রমিক। তাঁরা দুটি (১ ও ২ নম্বর) প্রধান সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্পনগরীর ২ নম্বর সড়ক ও পানিনিষ্কাশনের নালা নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। আড়াই কোটি টাকায় ওই কাজটি পায় ‘বিএম এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু করোনার সময় কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে কাজটি নার্গিস এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয়। গত বছরের অক্টোবরে আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য তারা সড়কে ইটের খোয়া ফেলে। এর পর থেকে বন্ধ রয়েছে কাজ।
বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের এখানে আনার উপায় নেই। মালামাল ওঠানামায় শ্রমিকদের পেছনে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রয়োজনে অর্থ দিয়ে হলেও তাঁরা নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিল্পনগরীর ৩ নম্বর প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই বাঁ পাশে ২ নম্বর সড়ক। প্রবেশপথে তিনটি বাঁশ ও সাতটি সিমেন্টের ব্লক দিয়ে সড়কটি বন্ধ করে রাখা। সড়কের নির্মাণকাজ চলছে সেটার সাইনবোর্ডও দেখা গেল। বন্ধ সড়কের খোয়ার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন হাজারো শ্রমিক। চলাচল করতে গিয়ে অনেকে আহতও হচ্ছেন।
সড়কটি খোঁড়াখুঁড়ির পর ইটের খোয়া ফেলে রাখায় শ্রমিকেরা চলাচল করতে সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান নিরাপত্তা প্রহরী মানিক সাহা। তিনি বলেন, ভোগান্তির কারণে শ্রমিকেরা তাঁদের গালিগালাজ করেন। কর্তৃপক্ষ রাস্তার কাজ শেষ না করলে তাঁরা কী করতে পারেন। কিন্তু শ্রমিকেরা বিষয়টি বুঝতে চান না।
অভিযোগের বিষয়ে নার্গিস এন্টারপ্রাইজের মালিক নার্গিস আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ কোটি টাকার সড়ক তাঁরা লোকসান দিয়ে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকায় নির্মাণ করছেন। ১ কোটি টাকার ওপরে কাজ করলেও মাত্র ৩৫ লাখ টাকার বিল পেয়েছেন। তিনি বলেন, বিসিকের প্রকৌশলীরা জটিলতা তৈরি করে বিল পরিশোধ না করায় কাজ বন্ধ হয়ে আছে। বিল পেলে দ্রুত সড়কের কাজ শেষ করা হবে।
পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগরীর এস্টেট কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিল না পাওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়মানুযায়ী কাজ শেষ করে বিল নিতে হবে। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ায় শ্রমিক ও মালিকেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। শিগগিরই কাজ শেষ করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’