বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতার পরিবারের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মাহিদুল ইসলাম ওরফে জয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার মাহিদুলের প্রতিবেশী ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম ওরফে মাসুদ বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। জমি দখল ছাড়াও এ সময় মাহিদুলের বিরুদ্ধে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ সময় জহিরুলের ভাই আরিফুল ইসলামের সঙ্গে মাহিদুলের ফোনালাপের রেকর্ডিংও সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করা হয়।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আল-মাহিদুল ইসলাম বগুড়ার সান্তাহার শহরের চা-বাগান এলাকার আশরাফুল ইসলামের ছেলে। এদিকে জহিরুল ইসলাম একই এলাকার ব্যবসায়ী। সংবাদ সম্মেলনে জহিরুল দাবি করেন, তাঁর পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনিও একসময় সান্তাহার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এখন তিনি ওষুধের ব্যবসা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জহিরুল অভিযোগ করেন, তিনি চা–বাগান এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন। পৌর আইন মেনে পাশের বাড়ি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দিয়ে তিনি বাড়ি করেছেন। তাঁর বাড়ির পাশে অন্য এক ব্যক্তির সোয়া দুই শতক জায়গার ওপরে বাড়ি আছে। পরে প্রতিবেশী ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ওই সোয়া দুই শতক জমিসহ বাড়িটি কিনে নেন ছাত্রলীগ নেতা মাহিদুলের বাবা আশরাফুল ইসলাম। বছর তিনেক আগে প্রথমে দুই বাড়ির মাঝের ফাঁকা জায়গায় টয়লেটের সেফটিক ট্যাংক বানিয়ে সেটি দখলের চেষ্টা করেন আশরাফুল। পরে এর ওপর স্ল্যাব দিয়ে চলাচল করতেন আশরাফুলের বাড়ির লোকজন। এর মধ্যে ফাঁকা জায়গাটি পুরোপুরি দখলে নিতে মাহিদুলের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর বাবা সেখানে দেয়াল তোলা শুরু করেন।

জহিরুলের দাবি, এ বিষয়ে পৌরসভা ছাড়াও আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন। পরে ইউএনও দুই পক্ষকে ৭ মার্চ উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ জারি করলেও আশরাফুল তাতে সাড়া দেননি। বরং তিনি ওই দেয়াল নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ জিডি নেয়নি বলে জহিরুল দাবি করেন। পরে বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপার ও র‍্যাব-১২ বগুড়া স্পেশালাইজড কোম্পানির অধিনায়কের কাছে তাঁরা অভিযোগ করেছেন। এতে ছাত্রলীগ নেতা মাহিদুল ক্ষিপ্ত হয়ে মুঠোফোনে জহিরুলের ভাই আরিফুল ইসলামকে হুমকি দিয়েছেন। জহিরুলের ভাই আরিফুল ইসলাম একজন সেনাসদস্য।

গতকাল বুধবার মাহিদুলের প্রতিবেশী ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন

জমি দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল-মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা (জহিরুল) আমাদের কাছে না এসে আমার বাবার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ এনে পুলিশ, র‍্যাব, উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভাসহ নানা জায়গায় অভিযোগ করেছেন। সবাই প্রকৃত বিষয়টা জানেন। আমরা কারও জায়গা দখল করিনি। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ১৯৮৫ সাল থেকে ওই জায়গায় বসতবাড়ি আছে। আমরা সেই বাড়ি কিনেছি। এখন রাস্তার জায়গায় সীমানা গেলে পৌরসভা বুঝবে। তাঁদের এখানে কী? তাঁরা আমার বাবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নানা অপ্রচার চালাচ্ছেন।’

মুঠোফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আল-মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাসুদের (জহিরুল) ভাই আরিফুলের সঙ্গে অনেক সময় নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। কোন সময়ের কথা রেকর্ড করে তিনি কোন প্রসঙ্গে জোড়া লাগাচ্ছেন, তা বলতে পারব না। না শুনে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করব না। তবে আমি কাউকে কোনো থ্রেট (হুমকি) করিনি।’

আদমদীঘির ইউএনও টুকটুক তালুকদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জমি দখলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়ে দুই পক্ষকে শুনানির জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছি। কিন্তু অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম নির্ধারিত তারিখে হাজির হননি। ব্যক্তিগত জমি দখলের বিষয়ে দুই পক্ষকে ডেকে শুনানি করা ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার খুব একটা সু্যোগ নেই। তবে পৌরসভার পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন করা হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।