দেশের প্রথম ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির চিঠি পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত পচি বেগমের সন্তান মেরিনা খাতুন। আজ রোববার তাড়াশ উপজেলা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মো. আইয়ুব আলীর কাছ থেকে তিনি চিঠিটি গ্রহণ করেন।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) উপপরিচালক (উন্নয়ন) প্রথম রঞ্জন ঘটক স্বাক্ষরিত চিঠিতে মেরিনা খাতুনকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল জামুকার ৮৯তম সভায় মেরিনা খাতুনকে ওই স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চিঠি পাওয়ার পর মেরিনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি স্বীকৃতির চিঠি পেয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। সেই সাথে স্বীকৃতি পেতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যেসব সংবাদকর্মী আমার পাশে ছিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মেরিনা খাতুন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। আবেদনে মেরিনা খাতুন উল্লেখ করেন, তাঁর মা পচি বেওয়াকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ জুলাই বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর ২০৫। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে তাড়াশের উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত ফাজিল আকন্দের স্ত্রী পচি বেওয়াকে বাড়ি থেকে স্থানীয় রাজাকাররা অস্ত্রের মুখে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আটক রেখে পাকিস্তানি বাহিনী তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়। এরপর জন্ম হয় যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের।
তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ‘যুদ্ধশিশু’ মেরিনা খাতুনের সংসার। তাঁর স্বামী ওমর আলী অসুস্থ হয়ে পড়ায় জীবন–জীবিকায় অনেকটা টান পড়েছে। তাই মেরিনা খাতুন সরকারের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার দাবি জানান।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আরশেদুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রথম ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে মেরিনা খাতুন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। পাশাপাশি তাঁকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় ভাতা দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।