রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ হবে হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে (মাদ্রাসা মাঠে)। সমাবেশ হবে তিন ঘণ্টার। অথচ ধর্মঘটের কারণে তিন দিন আগে থেকে নেতা-কর্মীরা এসে তাঁবু ফেলেছেন পাশের একটি ঈদগাহ মাঠে। সেখানে যেন সমাবেশের পাশাপাশি চলছে অন্য রকম এক উৎসব। বাইরে থেকে কোনো নেতা সেখানে ঢুকলেই দেওয়া হচ্ছে স্লোগান। নিজ এলাকার নেতার নামে চলছে খণ্ড খণ্ড মিছিল।
বরগুনা থেকে ধানের শীষ মাথায় বেঁধে এসেছে শুকুর আলী খাঁ। তিনি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে ভাষণ দিচ্ছেন। তাঁকে নিয়ে চলছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাতামাতি। ওই মাঠে বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে নিয়ে ‘প্রতিযোগিতা কর্নার’ করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলামের সৌজন্যে এ কর্নার তৈরি করা হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিভিন্ন ছবি সাঁটানো হয়েছে। তবে সেখানে কোনো প্রতিযোগিতা চলতে দেখা না গেলেও কেউ না কেউ ভাষণ দিয়েই যাচ্ছেন। এসব নিয়ে সমাবেশের আগেই সেখানে শুরু হয়ে গেছে ‘মিনি সমাবেশ’।
আজ শুক্রবার দুপুরে ঈদগাহ মাঠে শুকুর আলীর সঙ্গে ছবি তোলার জন্য নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা গেল। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলও তাঁর বক্তব্য নিচ্ছেন। শুকুর আলী টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরায় বলছেন, ‘আমি বরগুনা থেকে এখানে এসেছি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন, সেই সমাবেশকে সফল করার জন্য। আমাদের দাবি, দেশমাতা জনতার মা, আপসহীনতার মায়ের মুক্তির চাই।’
বক্তব্য শেষ করে নওগাঁর একটি তাঁবুতে গেলেন শুকুর আলী। সেখানে তিনি একটি ‘ভুভুজেলা’ বাঁশি নিয়ে বসেছেন। তাঁর চারপাশে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছেন। আর তিনি বাঁশি দিয়ে সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন।
এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা ঈদগাহ মাঠে ঢুকতে দেখা গেল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেখানকার সাবেক মেয়র আবদুস সালাম। মাঠে ঢুকেই তিনি শুরু করলেন ভাষণ। আবদুস সালাম বললেন, রাজশাহীতে আসতে তাঁদের পথে পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। মামলা করা হয়েছে। তাঁদের ২১০ নেতা-কর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এ সমাবেশ সফল করার জন্য এত কষ্ট করে এসেছেন। তাঁদের দাবি, এ সরকারের পতন হোক, খালেদা জিয়া মুক্তি পাক এবং তারেক রহমান দেশে ফিরুক।
সেলিম রেজার বক্তব্য কিছুটা ঢাকা পড়ে গেল পাশ দিয়ে যাওয়া একটি মিছিলের জন্য। লালন শাহ মঞ্চের দিকে বিক্ষোভ মিছিলটি গেল। তাঁদের একটাই স্লোগান—‘দুলু ভাই ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’।
আবার বেলা পৌনে একটার দিকে ‘হাবিব ভাই, ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—এই স্লোগান দিয়ে একটি মিছিল ঈদগাহ মাঠ প্রদক্ষিণ করে পাবনার তাঁবুতে ঢুকে গেল।
পাশের এক তাঁবুতে দেখা গেল বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বগুড়ার স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টালে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁর পাশে বসে আছেন জেলার বর্তমান সভাপতি শহীদুল ইসলাম। তাঁদের ঘিরে বসে আছেন তাঁদের ভক্ত-অনুসারীরা। তাঁরা বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে স্লোগান দিচ্ছেন।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, ‘সরকার আমাদের সমাবেশে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে। সরকারের বাধার কারণে তিন ঘণ্টার সমাবেশ, তিন দিনের সমাবেশে পরিণত হয়েছে। এজন্য সমাবেশস্থলেই পাশেই এখন সমাবেশ শুরু হয়ে গেছে। সেখানে অনবরত মিছিল, স্লোগান আর সংক্ষিপ্ত ভাষণ চলছে।’