বরিশাল সিটি নির্বাচন

আওয়ামী লীগে ‘ঐক্য প্রতিষ্ঠা’ নিয়ে শঙ্কা কাটেনি, হাসানাত আবদুল্লাহর ফেরার অপেক্ষা

আওয়ামী লীগের লোগো
আওয়ামী লীগের লোগো

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করেছেন বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে। এই কমিটি ঘোষণার দুই দিন অতিবাহিত হলেও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি দলীয় প্রার্থীর সমর্থকেরা। ফলে দলে ঐক্য ফেরা নিয়ে এখনো শঙ্কা কাটেনি।

তবে হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, তিনি শিগগিরই বরিশালে আসবেন। ছোট ভাইয়ের নির্বাচনী কাজে অংশ নেবেন। তবে তিনি কবে নাগাদ আসবেন, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

গত সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে ৩১ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। দলীয় মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে বরিশাল আওয়ামী লীগ নেতাদের যে দূরত্ব চলছে, এ কমিটির মাধ্যমে তা ঘোচার আশা করছিলেন অনেকে। এখনো সেই আশা জিইয়ে রাখছেন তাঁরা। তবে বরিশালের রাজনীতি পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে পারস্পরিক আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ওপর।

দলীয় সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে দল মনোনয়ন দিয়েছে তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহর সমথর্কেরা। ফলে গত ১৫ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে খায়ের আবদুল্লাহর পাশে নেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা। এমনকি ৩০টি ওয়ার্ডের নেতারাও সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশ ছাড়া নির্বাচনী কাজে অংশ নিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগে বড় ধরনের বিভাজন তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। এই বিভেদ ঘোচাতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করার উদ্যোগ নেন খায়ের আবদুল্লাহ। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, হাসানাত আবদুল্লাহ এবং সাদিক আবদুল্লাহ শিগগিরই বরিশালে আসবেন। এরপর জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের যৌথসভা করে সবাই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নামবেন। কিন্তু এরপর ২৬ দিন অতিবাহিত হলেও তাঁরা বরিশালে ফেরেননি। ঢাকায় অবস্থান করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস গত মঙ্গলবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিগগিরই আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালে ফিরবেন। তিনি নির্বাচনী কাজে অংশ নেবেন।’ কবে নাগাদ ফিরবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এখনো দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। তবে তিনি আসবেন।’

আবুল খায়ের দলের নেতাদের সহযোগিতা ছাড়াই নির্বাচনী কার্যক্রমে মাঠে আছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন দল থেকে ছিটকে পড়া এবং দলে কোণঠাসা এমন নেতা-কর্মীরা।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর সমর্থক নেতারা বলছেন, ৩১ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির অধিকাংশ সদস্যই তাঁদের সঙ্গে আছেন। কিছু সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন। এ ছাড়া নগর কমিটি এবং ৩০টি ওয়ার্ড কমিটির অনেক নেতা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নামতে চান। তবে সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশনা ছাড়া তাঁরা নামতে পারছেন না।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক লস্কর নুরুল হক বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আমাদের নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালে আসবেন এবং তাঁর ছোট ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচনী কাজে পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নেবেন।’ উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণার পর হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠদের কোনো সাড়া পেয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না এখনো পাইনি, তবে ৩১ সদস্যের কমিটির অধিকাংশই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কয়েকজন তাঁর (আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ) আসার অপেক্ষায় আছেন।’

মহানগর আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আর তাঁর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় জেলা নেতারাও সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে। ফলে আবুল খায়ের দলের নেতাদের সহযোগিতা ছাড়াই নির্বাচনী কার্যক্রমে মাঠে আছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন দল থেকে ছিটকে পড়া এবং দলে কোণঠাসা এমন নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া আছেন প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থকেরা।

এসব সমর্থকের অনেকে মনে করেছেন, সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর রাজনীতি অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। ফলে খুব সহজেই বিষয়টিকে মেনে নতুন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে শামিল হওয়াটা তাঁদের জন্য কঠিন। ফলে তাঁরা নির্বাচনী মাঠে অংশ নিলে বা নিলেও দলের ভেতরে যে সুপ্ত বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, তা ম্লান হওয়ার নয়।

আবুল খায়ের আবুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আমিন উদ্দীন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই সমীকরণটা এখন খুব স্পষ্ট। এটা অবশ্যই খুব সহজে সম্ভব নয়। তারপরও আমরা আন্তরিকভাবে চাইব, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালে আসবেন এবং আমাদের সবার সর্বজনীন নেতা হিসেবে আর্বিভূত হবেন এই নির্বাচনের মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না বরিশালের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মতো দুঃখজনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি এখানে ঘটুক।’

তবে এ ধারণাকে অমূলক বলে মন্তব্য করেছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেব পরিচিত নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য গোলাম আব্বাস চৌধুরী। তিনি বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমন একজন নেতা, যিনি বিভাজনে না, দলের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আজীবন কাজ করেছেন। আবুল খায়ের আবদুল্লাহর ৩১ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, ‘মঙ্গলবারও আমাদের নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছেন, এখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি অচিরেই বরিশালে ফিরে ছোট ভাইয়ের নির্বাচনী কাজে অংশ নেবেন।’