নওগাঁর মোকাম

চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা কমেছে

চাল
ফাইল ছবি

বাজারে আউশ ধান ওঠায় এবং ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু থাকায় নওগাঁর মোকামে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। সপ্তাহখানেক আগে মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমেছে মাঝারি ও সরু চালের দাম। ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের দাম বাড়ার যে প্রবণতা চলছিল, তা কমে গেছে।  

এর আগে গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাতে সব ধরনের চালের দাম মানভেদে পাঁচ থেকে সাত টাকা বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে ৩০ আগস্ট চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় ও গরিব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য বুধবার থেকে সরকার ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে।

মিলমালিক ও চালের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চালের আমদানি শুল্ক কমানোর ঘোষণার পর থেকেই মিলে উৎপাদিত চালের ফরমাশ (অর্ডার) কমতে শুরু করেছে। অনেকে আগের দেওয়া ফরমাশ বাতিল করেছেন। এ ছাড়া বুধবার থেকে সারা দেশে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কার্যক্রম চালু হওয়ায় খুচরা বাজারে চালের চাহিদা কমে গেছে। ফলে খুচরা চাল বিক্রেতারাও মোকাম থেকে চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। আমদানি করা চাল ইতিমধ্যে খোলাবাজারে আসতে শুরু করেছে।

আজ শনিবার নওগাঁর মোকামে সরু চাল মিনিকেট (শর্টার জিরা) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৪ টাকায়।এ ছাড়া মোটা চাল ব্রি-২৮ ও ব্রি-৪৯ চালের দাম কেজিতে চার টাকা কমে বর্তমানে ৪৯-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আজ শনিবার নওগাঁর মোকামে সরু চাল মিনিকেট (শর্টার জিরা)  প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৪ টাকায়। গত সপ্তাহে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৬৬ টাকায়। এ ছাড়া সরু চাল হিসেবে পরিচিত নন-শর্টার জিরা চালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি দুই টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। কাটারি চালের দাম কেজিপ্রতি তিন টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৬৩ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চাল ব্রি-২৮ ও ব্রি-৪৯ চালের দাম কেজিতে চার টাকা কমে বর্তমানে ৪৯-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ সদর উপজেলায় দুটি রাইস মিলের মালিক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। শুল্ক কমায় ইতিমধ্যে চাল আমদানি বেড়েছে। এ ছাড়া ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এসব কারণে স্বাভাবিক কারণেই চালের বাজারে প্রভাব পড়েছে। মোকামে চাল বিক্রি কমে যাওয়ায় মিলাররা বাজার থেকে ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাজারে ধানের দাম প্রতি মণে ২০০ টাকা কমে গেছে। এ ছাড়া জ্বালানি তেল প্রতি লিটারে ৫ টাকা কমায় কিছুটা হলেও ধান-চালের পরিবহন খরচ কমেছে। এসব কারণে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত কমেছে।

নওগাঁ শহরের আলুপট্টি মোকামে চালের আড়তদার মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর কারণে বাজারে চালের দাম আরও পড়ে যেতে পারে, এমন ভয়ে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বাজারের মহাজনেরা চাল কেনা কমে দিয়েছেন। অনেকে আগে যেসব অর্ডার দিয়েছিলেন, সেগুলো বাতিল করছেন। এ অবস্থায় মিলাররা বেশি লাভের আশা ত্যাগ করে দাম কমিয়ে উৎপাদন করা চাল বিক্রির চেষ্টা করছেন। কারণ, ভবিষ্যতে চালের দাম আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন মিলাররা।

নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মোকামে ক্রেতা নেই বললেই চলে। দিনের পর দিন মোকাম ক্রেতাশূন্য থাকায় মিলাররা দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন। সব ধরনের চালের দাম মানভেদে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। নতুন ধান পুরোদমে বাজারে উঠলে এবং আমদানি করা চাল আরও বেশি পরিমাণে স্থানীয় বাজারে এলে চালের দাম আরও কমে যাবে।