সিলেটে জেলা ও মহানগর যুবদলের নবগঠিত কমিটি নিয়ে শুরুতেই নানা বিতর্ক চলছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা, প্রবাসী, সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয়, অচেনা মুখ, অনুপ্রবেশকারী অনেকেই এ কমিটিতে আছেন বলে অভিযোগ করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, টাকার বিনিময়ে অনেকে কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। এ ছাড়া কমিটিতে জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘিত হয়েছে।
তবে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলছেন, যোগ্যতার ভিত্তিতেই কমিটিতে সবাই স্থান পেয়েছেন। যে বা যাঁরা অসন্তোষ জানাচ্ছেন, তাঁরা সংগঠনের জুনিয়র কিছু কর্মী। ছোট কমিটিতে সবাইকে ঠাঁই দেওয়া সম্ভব নয় বলেই তাঁরা স্থান পাননি।
স্থানীয় যুবদল সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেলা যুবদল এবং ১১ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবদলের পৃথক সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাদের সরাসরি ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালের পর এটাই ছিল কমিটি গঠনের সর্বশেষ উদ্যোগ। সম্মেলনে জেলা যুবদলে মোমিনুল ইসলাম সভাপতি ও মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্যদিকে মহানগর যুবদলে শাহনেওয়াজ বখত চৌধুরী সভাপতি ও মির্জা মো. সম্রাট হোসেন সাধারণ সম্পাদক হন।
সম্মেলনের দুই বছর পর কেন্দ্র থেকে গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম।
নবগঠিত জেলা যুবদলের কমিটি করা হয়েছে ২৯১ জনের। এর মধ্যে ২৯ জন সহসভাপতি, ৪০ জন যুগ্ম সম্পাদক, ৪৮ জন সহসাধারণ সম্পাদক আছেন। কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মাসরুর রাসেলকে। এ ছাড়া ৪৫ জনকে সহসাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন লিটন আহমদ। কমিটির অন্যরা বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে ছাড়াও সদস্য হিসেবে আছেন ৬৬ জন।
সিলেট মহানগর যুবদলের কমিটি ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট করা হয়েছে। কমিটিতে ২৭ জনকে সহসভাপতি, ৪৩ জনকে যুগ্ম সম্পাদক ও ৪১ জনকে সহসাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন মো. উমেদুর রহমান। এ ছাড়া ৫০ জনকে করা হয়েছে সহসাংগঠনিক সম্পাদক। কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন মো. মেহেদী হাসান। কমিটির অন্যরা বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে ছাড়াও সদস্য হিসেবে আছেন ৪৪ জন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপরই যুবদলের একটি অংশ বিক্ষুব্ধ হন। এ অবস্থায় সংগঠনটির কয়েক শ নেতা-কর্মী গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরে বিক্ষোভ সমাবেশ, ঝাড়ু ও জুতামিছিল এবং গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে মোটরসাইকেল মিছিল করেছে।
পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা মহানগর যুবদলের সহসভাপতির পদ পেয়েছেন। এ ছাড়া অনেক প্রবাসীও সম্পাদকীয় পদে এসেছেন। কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন ছাত্রলীগের কর্মীরাও। অনেক অচেনা মুখ ও সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিও কমিটিতে আছেন। টাকার বিনিময়ে অনেকে কমিটিতে এসেছেন। গত ১৭ বছর দলীয় কর্মসূচিতে নিবেদিতপ্রাণ অনেকে কমিটিতে স্থান পাননি। এটা গুটিকয় ব্যক্তির পকেট কমিটি হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিতর্কিত কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পদবঞ্চিত যুবদলের নেতা-কর্মীরা বক্তব্যে বলেন, ত্যাগী নেতা-কর্মীকে মূল্যায়ন করে কমিটি পুনরায় গঠন করতে হবে। এ কমিটি দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাহার করতে হবে। যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে জেল-জুলুম খেটে সিলেটের মাটিকে যুবদলের ঘাঁটি হিসেবে রূপ দিয়েছেন, তাঁরাই এখন বঞ্চিত হয়েছেন। অচেনা মুখও কমিটিতে স্থান পেয়েছে। নিকৃষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীরা যেভাবে রাজপথে ছিলেন, একইভাবে দলীয় এমন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেও নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এ ছাড়া ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে নগরে মোটরসাইকেল মিছিল বের করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।
পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের বিষয়ে জেলা যুবদলের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সিনিয়র কেউ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছিলেন না। ছোট ছোট কিছু কর্মী এসব করছেন। তাঁরা বিগত আহ্বায়ক কমিটিতে ছিলেন না কিংবা তাঁরা যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। মূলত ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মী যুবদলে আসতে চেয়েছিলেন, সবাইকে কমিটিতে রাখা যায়নি। আবার দেখা গেছে, অনেকে ছাত্রদলের কমিটিতেও আছেন। সম্ভবত জুনিয়র কর্মীরাই হবে। তবে কে বা কারা কর্মসূচি করেছেন, এর সঠিক তথ্য তাঁর জানা নেই।