ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না মাছ ধরা

বুধবার রাত থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। অভিযান চালাতে গিয়ে দুই স্থানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা হামলার শিকার হয়েছেন।

বরিশাল জেলার মানচিত্র
বরিশাল জেলার মানচিত্র

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে; কিন্তু বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে নদ-নদীতে ইলিশ শিকার করছেন।

মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রশাসনের সহায়তায় এসব জেলেকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় পাঁচ দিনে মৎস্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন ১৪৮ জেলেকে কারাদণ্ড ও তাঁদের ১ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন জানান, গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযান চালাতে যান। এ সময় নদীতে তিনটি ইঞ্জিনচালিতসহ পাঁচটি নৌকা ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়।

কিন্তু একপর্যায়ে ১৫০ থেকে ২০০ নারী-পুরুষ এক হয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। হামলাকারী জেলেরা ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ সময় জব্দ করা দুটি নৌকা রক্ষায় এগিয়ে গেলে তিন মাঝিকে পিটিয়ে আহত করেন হামলাকারীরা।

একই দিন দুপুরে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীতে অভিযানে গিয়ে জেলেদের হামলার শিকার হয়েছেন অতুল জোয়াদ্দার নামের এক মৎস্য কর্মকর্তা। গত শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে বলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাসিরউদ্দিন জানিয়েছেন। আহত অতুল জোয়াদ্দার উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা পদে কর্মরত।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরার অপরাধে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদীতে অভিযান চালিয়ে ১৪৮ জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের ১ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিভাগীয় মৎস্য অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৬ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ৫৫৯টি অভিযান চালানো হয়েছে। এসব অভিযানে ১ হাজার ৮৩০টি ইলিশ ও ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়। জব্দ করা জালের বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ১৪৮ জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের কাছ থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ ৩২ স্থান

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে মৎস্য অধিদপ্তরে একটি সভায় ইলিশ বিচরণে নদ-নদীর ৩২টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কয়েক বছর এই স্থানগুলোতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার প্রবণতা ছিল খুব বেশি। এর মধ্যে বরিশালে মেঘনা ও তার শাখা নদীর সাতটি স্থান অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো হলো বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের আসলি-আবুপুর, হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়নের ওরাকুল মাছঘাট, খালিসপুর-জানপুর; মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া ও কালাবদর নদীর বাগরজা এলাকা; মেঘনার গোবিন্দপুর, বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নসংলগ্ন ঝুনাহার মোড় এবং মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদ; চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া, হাইমচরের সাহেবগঞ্জ, উত্তর মতলবপুরের বোরোরচর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রায়পুর উপজেলার চরবংশি ইউনিয়নের নামারঘাট, চান্দারখাল; কমলনগর উপজেলার লুধুয়া মাছঘাট, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর লেকু ব্যাপারীর ঘাট, সুরেশ্বর বাংলাবাজার খালের মুখ, ঈশ্বরকাঠি খালের মুখ, মোক্তারের চর, খাসবাজার, বাবুরচর; জাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া, মাঝিরঘাট, পূর্বনা, ডোবা, বাবুরচর, কুণ্ডেরচর, ছিডারচর, শফি কাজীর মোড়, গোসাইরহাট উপজেলার বাংলাবাজার খাল, জৈয়ন্তি নদী, কুচাইপট্টি ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনার বিষকাঁঠালিয়া-মেঘনার অববাহিকা, ঠান্ডারবাজার ও টেকপাড় মৎস্য আড়তসংলগ্ন খাল; গোসাইরহাট-হাইমচর-চাঁদপুর সীমানার মেঘনার ৬০০ মিটার, ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর কাঁচিকাটা, দেওয়ানগঞ্জ ও মোল্লাবাজার।