আকাশ না দেখা মরিয়ম আকাশ ছুঁতে চান

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার
ফাইল ছবি

মরিয়ম আক্তারের কখনো আকাশ দেখা হয়নি। চাঁদ দেখতে কেমন তা–ও জানেন না। দৃষ্টিহীন হওয়ায় বাধ্য হয়েছেন অন্যের সহযোগিতা নিতে। পড়াশোনা করতে গিয়ে অডিওর ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। কিন্তু হাল ছাড়তে চাননি। অদম্য এই মেধাবী এবার এইচএসসিতে ৪ দশমিক ৮৩ পেয়ে মানবিক বিভাগ থেকে পাস করেছেন।

মরিয়ম বললেন, জন্মের পাঁচ মাস পর টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ঠিকঠাক চিকিৎসা হয়নি। পরে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তিই নষ্ট হয়ে যায়। আসতে থাকে নানা প্রতিবন্ধকতা। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারতেন না, লিখতে গেলেও থামতে হতো। অক্ষরগুলো চোখে পড়ত না।

মরিয়মের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের পূর্ব সোনাই এলাকায়। তাঁরা চার ভাই–বোন। তাঁর বাবা আবুল কালাম সবজি বিক্রেতা। মা রুবি বেগম গৃহিণী। মরিয়মরা এখন থাকেন চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগ এলাকায়। গতকাল রোববার এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন মরিয়ম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মুরাদপুরে সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। এসএসসি পাস করার পর অডিও শুনে পড়তে হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের অনেক কিছুরই অডিও পাওয়া যায়নি। ফলে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয়েছে।

মুঠোফোনে প্রথম আলোকে মরিয়ম তাঁর স্বপ্নের কথাটাই জানালেন। বললেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়তে চান। হতে চান আইনজীবী। কাজ করতে চান সমাজের পিছিয়ে পড়া নারী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে। সে জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তবে আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন।

মরিয়ম বলেন, বাবা কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁর ছোট বোনও দেখতে পায় না। সে পড়ছে নবম শ্রেণিতে। ফলে সংসারের সব খরচের পাশাপাশি পড়াশোনার ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁর বাবাকে। তবে তাঁরা দুই বোনই পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। কোনোভাবেই হাল ছাড়বেন না।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ প্রথম আলোকে বলেন, মরিয়ম ভালো ফল করেছে। নানা বাধা অতিক্রম করে সে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। মরিয়মের মতো দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের বোর্ড সব সময় সহযোগিতা করছে।

উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৮ পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৯৪৯ জন। পাস করেছেন ৭৫ হাজার ৯০৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৩৯ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৩ হাজার ৪৫৪ জন।